SCIATICA
সায়েটিকা
🔵 ডাঃ দীপালোক বন্দ্যোপাধ্যায়
Bengal Times News, 5 December 2024
▶️ কোমরের পিছন দিক থেকে পা পর্যন্ত ভীষণ ব্যথা ও আড়ষ্ট ভাব, ফলে রোগী হাঁটাচলা এবং স্বাভাবিক কাজ করতে কষ্ট পেলে আমরা চিকিৎসকরা প্রথমেই ভাবি উনি "সায়েটিকায়" ভুগছেন না তো ? আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় ও মোটা স্নায়ু বা নার্ভ হলো সায়েটিক নার্ভ৷ মানব শরীরের লাম্বার স্পাইনের শেষ দিকের ভাটিব্রা বা কশেরুকা এল ৩,৪,৫ এবং স্যাকরাল স্পাইনের এস -১ থেকে থাই বা উরুর পিছন দিক থেকে হাঁটুর নিচের মাংসপেশী হয়ে পায়ের আঙুল পর্যন্ত বিস্তৃত৷ ঐ নার্ভের উপর চাপ বা আঘাত থেকে যে লোব্যাক পেন বা ব্যথা হয় তাকে সায়েটিকা বলে৷
ডান ও বাঁ দুদিকে থাকে দুটি সায়েটিক নার্ভ৷ দেখা যায় যেকোন একদিকে কোমরের পিছন থেকে পা পর্যন্ত স্নায়ুর ডিষ্ট্রিবিউশন অনুসারে কোমর থেকে পায়ের আঙুল অবধি তীব্র ব্যথা হয়৷ অনেক সময় অবশ ভাব চলে আসে৷ একেই চিকিৎসাবিজ্ঞানে সায়েটিকা বলে৷ সাধারণভাবে ২০ বছর বয়সের আগে এরোগ হয় না৷ চল্লিশ বছরের পরে ধরা পড়ে। মানুষের শরীরের প্রতিটি ভার্টিব্রার নিচে নরম ইলাস্টিক কুশনের মত ডিস্ক থাকে৷ এর পিছনে থাকে স্পাইনাল ক্যানাল৷ এই ক্যানাল দিয়ে স্পাইনাল কর্ড বা স্নায়ুরজ্জু ও কিছু স্নায়ু যায়৷ কম বয়সীদের ডিস্কে অনেকটা তরল থাকে৷ যা জল ভরতি কুশনের কাজ করে৷ কিন্তু বয়স জনিত কারণে ওখানে তরলের পরিমাণ কমে গেলে ডিস্কগুলির চাপ সহ্য করার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
কোন কারণে কোন ডিস্ক ফেটে গেলে ভিতরের অংশ বের হয়ে পিছনে স্পাইনাল ক্যানালে চলে এসে নার্ভের ওপর চাপ দেয়। এভাবে সায়েটিকা হতে পারে৷ লাম্বার হার্নিয়েটেড/স্লিপডিস্ক হলে, ইজমিক স্পনডিলোলিসথেসিস, লাম্বার স্পাইনাল স্টেনসিস, পিরিফর্ম মাংসপেশীর চাপে, স্যাকরোইলিয়াক জয়েন্টে ডিসফাংশান হলে হতে পারে৷ স্নায়ু গুলো আমাদের মস্তিষ্কে শরীরের অনুভূতি বা সংবেদন এবং নড়াচড়া বা সঞ্চালনের তথ্য আদান প্রদান করে ব্যথা বুঝিয়ে দেয়৷ অর্থাৎ, কোমরে জোরে আঘাত লাগলে, ভারী বোঝা বইলে, উঁচু জায়গা থেকে পড়ে গিয়ে, অনেকক্ষণ ধরে ঠান্ডা স্যাঁতসেঁতে স্থানে বসে বা শুয়ে থাকলে, গর্ভাবস্থায় অনেক মহিলার পেট ফোলার জন্য নার্ভে চাপ পড়লে, ফরসেপ প্রসবের পরে, জরায়ুর টিউমারের চাপে, কোষ্ঠকাঠিন্যে, এমনকি ভিটামিন বি-১, বি-৬, বি-১২ এর অভাবে এরোগ হতে পারে। রোগীর ইতিহাস জেনে ক্লিনিকালি দেখে বুঝতে অসুবিধা হলে অনেক সময় ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং বা MRI করে রোগ নির্ণয় করতে হয়। অনেক সময় ব্যথা কোমরের বদলে হাঁটুর নিচে মাংসপেশীতে হয়৷ তীব্র কখনো কখনো তীক্ষ্ণ ইলেকট্রিক শক দেওয়ার মত, কখনো জ্বালাপোড়া হয়। হাঁচি কাশি হলে ব্যথা বাড়ে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি পঞ্চাশ জনে একজন জীবনের কোন না কোন সময় সায়েটিকার সমস্যায় ভোগেন৷ আমরা চিকিৎসকরা সামনের দিকে ঝুঁকে কাজ করতে, ভারী ওজন তুলতে বারণ করি৷ শক্ত বিছানায় ঘুমাতে বলি৷ সেঁক দিতে বলি৷ চিকিৎসকের নির্দেশিত ওষুধ ও নিয়ম মেনে চললে দরকারে ফিজিওথেরাপি করলে ভালো থাকা যায়৷ হাঁটাচলা ও বেড়ানোর সময় অনেক ক্ষেত্রে লাম্বার করসেট বা কোমরে বেল্ট ব্যবহার করতে হয়। ভাঙা রাস্তায় গাড়ীতে চড়তে নেই৷
গবেষণা বলছে এতে নব্বইভাগ রোগী সুস্থ হয়ে যান৷ তবে, সত্তর ভাগ কষ্ট কমলে আমরা চিকিৎসকরা বলি রোগী সুস্থ হয়ে গেছেন৷ পায়ে অবশ ভাব অর্থাৎ নিউরোলজিকাল সিম্পটম থাকলে অর্থাৎ যদি দেখা যায় রোগীর পা নিজের কথা শুনছে না তখন সারতে বেশ দেরী হয়৷ তবে, গবেষণায় দেখা গেছে ওষুধ খেয়ে, জীবনযাপনে পরিবর্তন এনে, বিশ্রাম নিয়ে এবং ফিজিওথেরাপি ও ব্যায়াম করে সত্তর ভাগ রোগী একমাসে সুস্থ হয়৷ আশি ভাগ রোগী নিজের কাজে যেতে পারেন৷ তবে ৩২% রোগীর একবছর পরে কিছু ব্যথা থাকে। তাদের ইন্টারভেনশন পদ্ধতি নিতে হতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে সার্জারীরও প্রয়োজন হয়৷ আয়ুর্বেদে যোগরাজ গুগ্গুল ও চন্দ্রপ্রভা ২টি করে বড়ি কুসুম গরম জলে সকালে ভিজিয়ে সন্ধ্যায় এবং সন্ধ্যায় ভিজিয়ে সকালে খেতে বলা হয়৷ প্রসারণী তেল কোমর থেকে নিচে মালিশ করতে হয়৷ হোমিওপ্যাথিতে ন্যাফেলিয়াম, হাইপেরিকাম, এগারিকাস মাস, বেলিস পার, স্ট্যাফিসাগরিয়া, রুটা, আর্ণিকা, সিম্ফাইটাম লক্ষণ অনুযায়ী দেওয়া হয়৷
Pic. Courtesy : Internet
যোগাযোগ : ৯৭৩২২১৭৪৮৯