Deep conspiracy
তেজগঞ্জ হাই স্কুলের শিক্ষক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার
Bengal Times News, 14 April 2025
বেঙ্গল টাইমস নিউজ, বর্ধমান : গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার তেজগঞ্জ হাই স্কুলের বাংলার শিক্ষক বিশ্বরূপ দাস। এমনটাই বলছেন শহর বর্ধমান সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার শিক্ষক - শিক্ষিকারা সহ অগণিত ছাত্র - ছাত্রী ও বিশিষ্ট মানুষজন। ছাত্র-ছাত্রী পরিপূর্ণ শ্রেণী কক্ষে একজন শিক্ষক ষষ্ঠ শ্রেণীর কোনও ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেছেন, সেই ঘটনা কেউই জানলো না। অথচ হঠাৎ করেই অভিযোগের তিরে শাণিত একজন শিক্ষক। ক্লাসে শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তর না দিতে পারলে শাসন করা অথবা ভালো উত্তর দেওয়ার জন্য যদি কোনও ছাত্র বা ছাত্রীকে শিক্ষক স্নেহ বশতঃ মাথায় বা পিঠে হাত দেন, এটাকে শ্লীলতাহানি বলে না। ছোট্ট ছাত্রীটিকে সামনে রেখে যারা বিশ্বরূপ বাবুর সম্মানহানি করলেন, পুলিশী তদন্তে শীঘ্রই আসল সত্য বেরিয়ে আসবে। স্কুলে সাধারণ মানুষ চড়াও হয়েছেন অথচ প্রধান শিক্ষক দূরে কোথাও গা ঢাকা দিয়ে বসে আছেন। তিনি নাকি সারা দিন ধরে মিটিং করছেন। বর্ধমান থানার পুলিশ সঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছে শিক্ষক বিশ্বরূপ দাসকে উদ্ধার করে না আনলে প্রাণহানির মতো বড় কোনও অঘটন ঘটে যেতে পারতো। ঘটনার প্রেক্ষাপটে বড়সড় ষড়যন্ত্রের আঁচ পাচ্ছেন অনেকেই।
শিক্ষক বিশ্বরূপ দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করার ঘটনায় তার ছাত্র ছাত্রী সহ বহু মানুষ সরব হয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড় বইছে। ফেসবুকে একটি খবরের প্রেক্ষিতে ভারতী সাহা নামে একজন লিখেছেন, 'আমরা এরকম কিছু যে স্যার করতে পারে তা মোটেই বিশ্বাস করি না। ছাত্র ছাত্রীরা অন্যায় করলে স্যার শাস্তি দেবেন এটা সাধারণ কথা। এবার তা বলে সে যদি মেয়ে বলে আইনের অপব্যবহার করে তা হলে সেই মেয়ে এর জন্য আমরা গোটা মেয়ে সমাজ লজ্জিত।
আমি স্যার কে অনেক দিন ধরে চিনি স্যার যে এরকম করতে পারেন তা আমি মোটেই বিশ্বাস করি না। আমরা জানি সত্যের জয় হবেই, আমার মত যারা বিশ্বাস করে যে আমাদের স্যার এইরকম কিছু করতে পারেন না তারা স্যারের পাশে আছি এবং থাকবো। ভালো মানুষের কেউ ক্ষতি করতে পারবে না।'
অয়ন ঈশান ঘোষ নামে একজন লিখেছেন, 'আমি নিজেও বিশ্বরূপ স্যারের ছাত্র, বুক ঠুকে গর্বের সাথে বলছি স্যার ওরকম মানুষ নন, কোনো দিন ওই কাজ স্যার করতে পারেন না, ৪ বছর ধরে ওনার কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেছি, ওনাকে খুব ভালো ভাবে চিনি...
এমনকি প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রী নির্বিশেষে সকলকে স্যার নিজের সন্তানের ন্যায় স্নেহ করেছেন সর্বদা ... ঐ মেয়েটির ও মেয়েটির মায়ের নিজেরই চরিত্রের ঠিক নেই, ঐ জঘন্য নোংরা মেয়ে ও তার নোংরা পরিবার স্যারের মতো দেবতুল্য মানুষকে ফাঁসাচ্ছে ... যারা ওনার সম্মান নিয়ে খেলা করলো, তারা প্রত্যেকে জঘন্য মানুষজন আর উনি পার্শ্ব শিক্ষক নন, উনি respected permanent teacher, যেমন মিডিয়া তেমন ঈর্ষান্বিত চক্রান্তকারী, মাথা মোটা গুলো আর managing committee - র secretary মেয়েটির পরিবারকে কে নিজের বাড়িতে কেনো ডাকছেন ?? আগে যদি এই ঘটনা হয়েই থাকে তবে সবাই কি মুখে ললিপপ চুষছিলো?? আদৌ স্যারকে ফাঁসানো হচ্ছে এই ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছে কেউ?? গুরুর উপর এত বড়ো অপবাদ, ঐ মেয়েটির দ্বারা কোনোদিনও পড়াশোনা, সাফল্য, শিক্ষার সু প্রয়োগ কোনোটিই সম্ভব না... ঐ মেয়েটির ভবিষ্যৎ ও জীবন সম্পূর্ণ অন্ধকার, এই সাথে অন্ধকার হবে তাদের জীবনও যারা এইরকম নোংরা অভিযোগ এই দেবতুল্য মানুষটির বিরুদ্ধে এনেছে আমরা স্যারের সকল ছাত্র ছাত্রীরা ওনার পাশে আছি'।
তেজগঞ্জ হাই স্কুলের এক ছাত্রী ফেসবুক পেজে একটি খবরের প্রেক্ষিতে লিখেছে, 'র্আমি এই স্কুলের class 9 এর ছাত্রী। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ। এনারা বলছে সব মেয়েদের সাথে তিনি এরকম করেন কিন্তু আমার বহু সহপাঠী ও আমার সাথেও তিনি কখনও এরকম ব্যবহার করেননি। আমরা এত বছর ধরে তার কাছে পড়ছি তিনি কখনও আমাদের খারাপ চোখে দেখেননি। ওই মেয়েটি কি ক্লাসে একা ছিল? আর কেউ ছিল না নাকি ? কেউ দেখেনি?
এনারা বলছে ৩-৪ মাস ধরে এইরকম চলছে কই আমরাতো ওই স্কুলের ছাত্রী আমারতো কিছ্ছু টের পাইনি। স্যারের প্রতি মিথ্যে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। কোনো কিছুতে ভুল হচ্ছে
তিনি ওরকম মানুষ না'।।
সুমন ঘোষ নামে একজন লিখেছেন, আমরা স্যারের কাছে ৮ বছর পড়েছি। একদমই মিথ্যা খবর। পুরোপুরি সাজানো ঘটনা। ওনার মতো গুনী মানুষ সমাজে খুঁজে পেতে আতশকাঁচ লাগবে আজকের দিনে। পুরোপুরিভাবে ফাঁসানো হয়েছে আমাদের স্যারকে, শিখিয়ে-পড়িয়ে এইভাবে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কি লাভ হল ? আর সত্যতা যাচাই না করে পুলিশের অতি সক্রিয়তা চোখে পড়ার মতো। কিন্তু পরে যদি এই ঘটনার সত্যতা প্রমাণ পুলিশ না করতে পারে তখন যেন পুলিশই মাথায় করে স্যারকে সসম্মানে আপন জায়গায় ফিরিয়ে দিয়ে যায়। যেখানে দরকার সক্রিয়তা দেখানোর সেখানে মেরুদন্ড বিক্রি হয়ে যায়। আর সাংবাদিকের কাজ শুধু খবরের প্রচ্ছদ প্রকাশ করা নয়, খবরের সত্যতা যাচাই করাও তার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আবারো বলছি এটা একদমই চক্রান্ত করে জেনে বুঝে আমাদের স্যারকে কালিমালিপ্ত করতে একশ্রেণী যে নোংরা খেলা খেলছে তার বিরুদ্ধে ধিক্কার জানাই। এর বিচার হবেই। এই মিথ্যা অপবাদে আমাদের স্যারের থেকেও এই সমাজের ক্ষতি হল বেশি। কেননা স্যারের সমাজকে না, এই সমাজের আমাদের স্যারের মতো গুনী মানুষের প্রয়োজন। এটা এই সমাজ যত তাড়াতাড়ি অনুভব করবে ততই সমাজের মঙ্গল'।
কার্তিক দাস লিখেছেন, '১১ তারিখ যে ঘটনাটা ঘটেছে সে ঘটনাটা একদমই স্যারের সঙ্গে ঠিক হয়নি। স্যারের বিরুদ্ধে যে অপবাদ দেওয়া হয়েছে সে অপবাদ আমি কল্পনাও করতে পারি না। সত্যি মানুষটা অনেক ভালো, স্যারের বিরুদ্ধে এরূপ অপবাদ আমি মেনে নিতে পারি না। স্যার প্রত্যেকটা ছাত্রছাত্রীকে নিজের সন্তানের মতই মনে করেন। স্যার আমাদের বাংলা ক্লাস নিতেন আমাকে বইয়েও দিয়েছিলেন ফ্রিতে বাংলা বই। শুধুমাত্র ক্লাসের ভালো ছাত্রছাত্রী নয় যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী পড়াশোনায় দুর্বল তাদেরও স্যার বলতেন যে, কি করলে ছেলেরা পড়াশোনা করবে, কতদিন সময় লাগবে এভাবে স্যার বলতেন। যেসব মানুষেরা স্যারকে খারাপ বলছেন তারা যদি পারেন স্যারের একটু ব্যাকগ্রাউন্ডটা চেক করবেন, স্যার এর ফেসবুক হলো স্যারের ব্যাকগ্রাউন্ড'।
কুহেলি চ্যাটার্জী ভট্টাচার্য লিখেছেন, 'বিশ্বরূপবাবু যথেষ্ট গুণী এবং ভদ্র মানুষ। উনার ছাত্রদরদী মনোভাব বা উনার জনপ্রিয়তাতে ঈর্ষান্বিত হয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উনাকে একদল মানুষ নিশ্চয় উনাকে এই অসম্মানটা করলেন বা উনাকে ফাঁসালেন। ছিঃ! যারা এই সম্মানীয় ব্যক্তিটির সম্মান নিয়ে খেলা করলেন, নিজের বিবেকের কাছে একবার প্রশ্ন করুন, এটা কি ঠিক করলেন?!'
ফেসবুক পেজে খবরের প্রেক্ষিতে পূজা মন্ডল লিখেছেন, 'আজ খবরটা দেখে খুব মনটা খারাপ হয়ে গেলো। স্যার এই রকম নয়, স্যার কে ফাঁসানো হয়েছে। স্যার পঞ্চপল্লী (আমাদের স্কুল) শিক্ষক ছিলেন আমাদের সঙ্গে এই রকম কোনো দিন আচরন করেনি, আজ হঠাৎ অন্য স্কুলে যাওয়ার পর খারাপ হয়ে গেলো? আমরা ৬ বছর পড়েছি, কই আমাদের কোনো দিন মনে হয়নি তো। যে সকল মানুষ স্যারকে অপবাদ দিয়েছে তাদের সকলকে ধিক্কার জানাই।'
রীতা বোস লিখেছেন, 'স্যার কে আমরা অনেক বছর থেকে চিনি । স্যার অতিশয় ভদ্র মানুষ । এধরনের বাজে কাজ স্যার কোনোদিন করতেই পারেন না। দয়া করে স্যার এর বিষয় এ এইরকম বাজে কথা বলা বন্ধ করুন ।
এটা স্যার কে ইচ্ছাকৃতভাবে ফাঁসানো হচ্ছে । উনি পার্শ্ব শিক্ষক নন উনি একজন সম্মানীয় শিক্ষক।'
অনুভব ঘোষ লিখেছেন, 'একটা জিনিস দেখি নিউজে... লোকে রেপ করছে, চুরি, ছিনতাই, মার্ডার ...সবার মুখ তো ব্লার করে দেওয়া হয়/ মুখ ঢেকে দেওয়া হয়। কিন্তু একটা এক্ষেত্রে তা নয় কেনো !?? আমি জানি না এই লোকটা দোষী কিনা। তবে এনার মুখটা এই রকম ভাবে প্রকাশ্যে দেখাচ্ছেন কি ভাবে আপনারা !!?
শিক্ষক বিশ্বরূপ দাসকে গ্রেপ্তার করার ঘটনায় জনমানসে কিছু প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো। আসলে দুদিন ধরে বহু মানুষ বলছেন সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে। তারই প্রেক্ষিতে এই প্রতিবেদনে কয়েকজনের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো।