Tribal Fair
পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন ব্লকে মহাসমারোহে দু'দিন ব্যাপী জয় জোহার মেলা
Saiyad Abu Jafar, Kalna
Bengal Times News, 20 November 2024
অতনু হাজরা, জামালপুর # সৈয়দ আবু জাফর, কালনা # সেখ সামসুদ্দিন, মেমারি : বিরসা মুন্ডার ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ২০ নভেম্বর কালনা ১ নম্বর ব্লকের নান্দাই পঞ্চায়েতের অন্তর্গত নান্দাই ব্রিজ ফুটবল ময়দানে জয় জোহার মেলার উদ্বোধন হলো। সারা রাজ্যের ১৫ টি জেলার ১০২ টি আদিবাসী অধ্যুষিত ব্লকে এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বুধবার কালনা ১ ব্লকে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে এই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ডাঃ শর্মিলা সরকার, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ আরতি খান, কালনা ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রাবণী পাল সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
এই মেলায় আদিবাসীদের উন্নয়নকল্পে ১১ টি সরকারি স্টল বসে। ২০ এবং ২১ নভেম্বর এই স্টল গুলি থেকে সমস্ত আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন বিভিন্ন সরকারি সাহায্য যেমন এস টি কার্ড ,ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আধার কার্ড, খাদ্য দপ্তর থেকে রেশন কার্ড, কৃষি দপ্তর থেকে ফসলের বীজ এবং স্প্রে মেশিন প্রদান করা সহ একাধিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা থাকবে।
আজ এখানে শিক্ষা দপ্তর থেকে আদিবাসী ছেলেমেয়েদের হাতে স্কুলের ব্যাগ তুলে দেয়া হয়। এছাড়াও প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে আদিবাসী মহিলাদের হাতে দশটি করে মুরগির ছানা তুলে দেওয়া হয়।
আজ এখানে স্কুলের বাচ্চাদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আজ এখানে সকলের জন্য মধ্যাহ্ন ভোজের ব্যবস্থা করা হয়। এই মেলায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনের ধামসা মাদলের তালে মুখরিত হয় সমগ্র মেলা প্রাঙ্গন। আদিবাসী নাচ এবং গানের মধ্যে দিয়ে সমগ্র অনুষ্ঠানটি এগিয়ে চলে।
জামালপুর ব্লকে দু'দিন ধরে আদিবাসী মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে পাঁচড়া কিষানমান্ডিতে। বুধবার আদিবাসী নিয়ম মেনে পূজা পাঠ করা হয়। ফিতে কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মেহেমুদ খান, বিডিও পার্থ সারথী দে ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পূর্ণিমা মালিক সহ অন্যান্যরা।
এদিনের এই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক অলক কুমার মাঝি, বিডিও পার্থ সারথী দে, জয়েন্ট বিডিও রুদ্রেন্দু নন্দী,পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পূর্ণিমা মালিক, সহ সভাপতি ভূতনাথ মালিক, অসুস্থ শরীর নিয়েও উপস্থিত ছিলেন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মেহেমুদ খাঁন, কৃষি আধিকারিক কাজী সঞ্জীবুল ইসলাম, ব্লকের বি সি ডাবলু ই অফিসার সুপ্রভাত মুখার্জী, আদিবাসী সমাজের বিভিন্ন মাজি বাবা, আদিবাসী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তারক টুডু, দেবু হেমব্রম, রবিন মান্ডি, লালু হেমব্রম, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষগণ, প্রধান, উপ প্রধান, বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক সহ অন্যান্যরা।
পতাকা উত্তোলন করেন বিধায়ক সহ অন্যান্য অতিথিরা। আদিবাসী ভাষায় উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের শিল্পীরা। বিধায়ক বক্তব্য রাখতে গিয়ে আদিবাসী সমাজের জন্য মুখ্যমন্ত্রী কী কী কাজ করেছেন তার খতিয়ান তুলে ধরেন।
মেহেমুদ খান বলেন, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের আদিবাসী সমাজের জন্য অনেক কিছুই করেছেন। আজ এই মেলায় সেই কারণে পুরো ব্লক অফিস তুলে নিয়ে এসেছেন। বিভিন্ন দপ্তরের স্টল হয়েছে এখনও পর্যন্ত যাঁরা বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধা পাননি তাঁরা স্টলে গিয়ে সেই সুযোগ সুবিধা গুলি নেবেন। আধিকারিকরা আছেন সাহায্য করার জন্য।
বিডিও পার্থ সারথী দে বলেন, জাতি গত শংসাপত্রের জন্য যাদের সমস্যা আছে তাঁরা যেন দ্রুত ব্লকের সংশ্লিষ্ঠ আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের দ্রুত ব্যবস্থা করা হবে। মেলায় প্রথম দিন চার দলীয় পুরুষ ও মহিলা ফুটবল প্রতিযোগিতা করা হয়।
এছাড়াও দুদিনের এই অনুষ্ঠানে থাকছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। মঞ্চ থেকে আদিবাসী সমাজের মানুষের হাতে ধামসা মাদল, কৃষি সরঞ্জাম, ছাত্র ছাত্রীদের হাতে জাতিগত সংসা পত্র, সাইকেল, জুতো সহ বিভিন্ন জিনিস তুলে দেওয়া হবে। এই আদিবাসী মেলায় স্থানীয় প্রচুর আদিবাসী মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে পরিচালনা করেন রবিন মান্ডি।
আজ মেমারি ১ ব্লকের কিষাণ মান্ডিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তর ও মেমারি ১ পঞ্চায়েত সমিতির পরিচালনায় ও সহযোগিতায় জয় জোহার মেলার উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন বর্ধমান পূর্বের সাংসদ ডাঃ শর্মিলা সরকার, মেমারি বিধানসভার বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য, মেমারি ১ সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক শতরূপা দাস, যুগ্ম সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক অনন্যা বেরা, জেলা পরিষদ বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ নিত্যানন্দ ব্যানার্জী সহ জেলা পরিষদ সদস্যবৃন্দ, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশ হাঁসদা, সহ-সভাপতি বসন্ত রুইদাস সহ সকল কর্মাধ্যক্ষ ও ব্লকের বিভাগীয় আধিকারিক সহ আধিকারিকরা।
২০ ও ২১ নভেম্বর এই দুই দিনে আদিবাসী সম্প্রদায়ের নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সহ বিভিন্ন বিভাগীয় সরকারি পরিষেবা প্রদান করা হবে বলে জানান নিত্যানন্দ ব্যানার্জী।