এক সন্ধ্যায় পঞ্চ কবি : সল্টলেকের রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনে কলতান ওয়েভস ফাউন্ডেশন এর বর্ণময় অনুষ্ঠান
Bengal Times News, 30 August 2024
লুতুব আলি, সল্টলেক : ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলার নবজাগরণের যে ঢেউ উঠেছিল সেই ঢেউয়ের স্রোতে বাংলার লেখক, বিপ্লবী, বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। বিশেষ করে ১৮৬১ থেকে ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে যে কয়জন জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অতুল প্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রমুখ। এই সময়ের তিন দশক পর কাজী নজরুল ইসলাম উদীয়মান হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এই পঞ্চজনকে কলকাতার সল্টলেকের রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনে বিশেষভাবে স্মরণ করলো কলতান ওয়েভস ফাউন্ডেশন। এই সংগঠনের কর্ণধার তথা বিশিষ্ট শিক্ষিকা মধুমিতা বসু অনুষ্ঠানের নান্দনিক সূচনা পর্বে সকলকে স্বাগত জানান এবং স্বাগত ভাষণ দেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে স্মরণীয় এই পাঁচজন কবি লেখনীর ক্ষুরধার কে শাণিত করেছিলেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবীরা এঁদের লেখায় প্রাণিত হয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। দেশের আপামর মানুষও উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। জালিয়ানাবাগের হত্যাকান্ডের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাইট উপাধি ত্যাগ করেছিলেন। ব্রিটিশ বিরোধী লেখার জন্য কাজী নজরুল ইসলামকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। অতুলপ্রসাদ সেন বিলেত থেকে পড়াশোনা করে ইংরেজদের অধীনে চাকরি করলেও স্বদেশপ্রেম তাঁকে থামাতে পারেনি। অতুলপ্রসাদ সেনের দেশাত্মবোধক লেখা ভারতবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছিল। মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়, মাথায় তুলে নেরে ভাই... এই চিরন্তন লেখা আজও চিরন্তন হয়ে আছে। অন্যদিকে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় লেখনির এক ঘরানা সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি সকলের কাছে ডিএল রায় নামে আজও পরিচিতি বহন করেন। মধুমিতা বসু বলেন, সমাজের গুণী ও লোক চক্ষুর আড়ালে যে সমস্ত ব্যক্তিত্বরা মানব কল্যাণে কাজ করে চলেছেন তাদের যোগ্য সম্মান জানাতে ও তাদের কর্মকান্ডকে তুলে ধরতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন। পাঁচজন বরেণ্য কবিকে স্মরণ করার পাশাপাশি এদিনের বর্ণময় অনুষ্ঠান সকলের মনকে স্পর্শ করেছে। অনুষ্ঠানে বাংলা গানের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় ১০ জনকে সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়।
এক সন্ধ্যায় পঞ্চ কবি গানে গানে পঞ্চ কবিকে শ্রদ্ধা জানালেন সংগীত শিল্পীরা। সংগীত পরিবেশনে ছিলেন শিলং থেকে আগত ঊর্মীমালা চৌধুরী, কলকাতার মনিদীপা চক্রবর্তী, সোমা চক্রবর্তী, অর্ণব রায়, শর্মিষ্ঠা ঘোষ, সীমা মন্ডল, দীপাঞ্জন ব্যানার্জি, বনশ্রী চক্রবর্তী, মহুয়া শীল, সোহম সেনগুপ্ত, স্বর্ণা মন্ডল, দীপঙ্কর চৌধুরী, মালবিকা ভট্টাচার্য, অশোক মিত্র, সুদেষ্ণা ব্যানার্জি এবং সম্মেলন গানে ছিল রবি আঙ্গিক ও মল্লার। বাংলা গানের অনুষ্ঠানে তাদের সকলকে সম্মানিত করলেন সংস্কার কর্ণধার মধুমিতা বসু। ৯ বছর আগে পথ চলা শুরু হয় কলতান ওয়েভস ফাউন্ডেশনের। এদিনের অতিথি হিসেবে সম্মানিত হলেন বং সিনেমাটিকের কর্ণধার বিশ্বরূপ সিনহা, বিশিষ্ট সমাজ সেবক মনোতোষ বেরা, সমাজ সেবক ও শিল্পপতি গৌতম দাস, কবি রিনা গিরি, সংগীতশিল্পী ও সুরকার উজ্জ্বল সোম, অধ্যাপক জয়ন্ত চৌধুরী সহ অন্যান্যরা।
এই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে চিরদিনের গানের অ্যালবাম উন্মোচন করা হয়। কবিতা ও গানের সংকলন। স্বর্ণযুগের গান থেকে কৃষ্ণ ভজন ও মৌলিক গান। সংগীতশিল্পী অনিমিত ভট্টাচার্যের কন্ঠে চারটি গান ও রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও নির্মলেন্দু গুণ, প্রমদ বসুর কবিতা স্থান পেয়েছে এই অ্যালবামে। কবিতার উচ্চারণে মধুমিতা বসু। সমগ্র অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন রঞ্জনা কর্মকার। অনুষ্ঠানের পরিচালনাও ভাবনায় মধুমিতা বসু। কলকাতার বুকে এই ধরনের একটি মহতী অনুষ্ঠানের আয়োজন হওয়ায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলে উচ্চ প্রশংসা করেন।