স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে হুগলির জেলে গিয়ে কাজী নজরুল ইসলামকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলো কবির উত্তরাধিকারীরা
Bengal Times News, 14 August 2024
লুতুব আলি, হুগলি : ভারতের স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে হুগলির জেলে গিয়ে কাজী নজরুল ইসলামকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলেন কবির উত্তরাধিকারীরা। কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি তথা বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী সোনালী কাজী দোলনচাঁপা নজরুল ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে নজরুলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন। প্রমিলা দেবীর সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর নজরুল পাকাপাকি ভাবে হুগলিতে বেশ কিছুদিন বসবাস করেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে লিখতে গিয়ে রাজদ্রোহীতার দায়ে তাঁকে হুগলির জেলে বন্দি থাকতে হয়েছিল। হুগলি জেলের ৫ নং সেলে শশ্রম কারাগারে থাকতে হয়েছিল। হুগলি জেলের এই সেলে গিয়ে দোলন চাঁপার কর্ণধার ও কর্মকর্তারা, সদস্য সদস্যরা এবং এই জেলের আধিকারিকেরা নজরুলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। নজরুলের লেখা কালজয়ী গান কারার ঐ লৌহ কপাট...., শিকল পড়ার ছল....., বিভিন্ন গানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। নজরুলের আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান করা হয়।
রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতিতেও মাল্যদান করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন সোনালী কাজী। উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক অসিত মজুমদার, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের আধিকারিক প্রদীপ্ত আর্য, ইন্দ্রজিৎ দত্ত, শিশির চক্রবর্তী, সেলিম দুরানি বিশ্বাস, নন্দিনী লাহা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে চুঁচুড়া শহরের সাহিত্য সংস্কৃতি জগতের ধ্রুবতারা ডা: অক্ষয় কুমার আঢ্য কে নজরুল সম্মাননা তুলে দেন সোনালি কাজী। উল্লেখ্য কাজী নজরুল ইসলামের জেল জীবন ও বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ পার হয়ে গেছে। কবির ১২৫ তম জন্মদিন কবিতীর্থ চুরুলিয়ার দোলনচাঁপা নজরুল ফাউন্ডেশন রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সারা বছর ধরেই পালন করছেন। এমনকি ঢাকাতে গিয়েও অনুষ্ঠান করার নজির আছে। উপনিবেশিক ভারতে দুখু মিয়া জন্মগ্রহণ করে জ্ঞান হওয়ার পর দেখলেন ইংরেজদের নির্মম অত্যাচার। শৈশব থেকেই এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে নজরুল গর্জে উঠেছিলেন। কেবল লেখার জন্য নজরুলকে মার্ডার কেসের আসামির মত রাজদ্রোহিতার দায়ে অত্যাচারী ইংরেজ সরকার বহুবার কারাবন্দী করে। ১৯২৩ সালে ইংরেজ পুলিশ নৈহাটি স্টেশনে নজরুলকে ধরে আনার সময় আম জনতা নজরুলের দৈন্যদশা দেখে উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিল। হুগলির জেলে আনার সময় নজরুলের কোমরে দড়ি বাঁধা, হাতে হ্যান্ডকাপ, কয়েদিদের নম্বর দেওয়া অবস্থা দেখে সেদিন সকলেই হতচকিত হয়ে যান! হুগলি জেলে এসে কয়েদিদের উপর অত্যাচার ও অব্যবস্থা দেখে নজরুল ক্ষোভে ফেটে পড়েন! তিনি জেলে বসেই লিখে ফেললেন কারার ঐ লৌহ কপাট, ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট...., শিকল ভাঙার গান প্রভৃতি। হুগলি জেলেই নজরুল আমরণ অনশন শুরু করলেন। এই অনশন ভাঙ্গানোর জন্য ছুটে এসেছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, নলিনীকান্ত সরকার, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়, নৃপেন্দ্র কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, হামিদুল হক, সিরাজুল হক, ডাঃ সুরাবর্দি প্রমুখরা। এঁদের কাউকেই নজরুলের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের অনশন ভাঙ্গানোর জন্য এক বিশেষ বার্তা পাঠান। রবীন্দ্রনাথের সেই বার্তাও নজরুলের কাছে পাঠানো হয়নি। হুগলি জেলা নজরুলের আমরণ অনশন দেখে কুমিল্লার নজরুলের ধর্ম মা বিরাজ সুন্দরী দেবী হুগলির জেলে ছুটে এসেছিলেন। নজরুলকে বুঝিয়ে তিনি এই অনশন ভাঙ্গান। সোনালী কাজী এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কিংবদন্তি, কালজয়ী নজরুলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে দোলনচাঁপা নজরুল ফাউন্ডেশন সহ ১৮ টি সংস্থা হুগলির জেলে অনুষ্ঠান করেন। অনুষ্ঠানে কবিকে বিশেষভাবে স্মরণ করেন বিশিষ্ট কবি অরুণ চক্রবর্তী। তিনি আরও জানান, নজরুল শোষণহীন সমাজ চেয়েছিলেন। নজরুলের স্বপ্নপূরণ হয়নি! নজরুলের আদর্শকে তুলে ধরতে দোলনচাঁপা নজরুল ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে আমাদের রাজ্য সহ দেশ এবং বিদেশেও এই আন্দোলনের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অগ্রসর হয়েছি।