Women's College, Calcutta
পঠন-পাঠনের মানোন্নয়নের সঙ্গে সামাজিক ও অর্থনৈতিক আলোর দিশা দেখাচ্ছে কলকাতা উইমেন্স কলেজ
Bengal Times News 29 April 2024
লুতুব আলি, কলকাতা : কলকাতার বাগবাজারের উইমেন্স কলেজ দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির অনেক আগেই ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কলকাতা উইমেন্স কলেজ ভগিনী নিবেদিতা স্মৃতি বিজড়িত। পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারী শিক্ষার জন্য যে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন তা সর্বজনবিদিত। তিলোত্তমা কলকাতার বাগবাজার বরাবরই এলিট শ্রেণীর বসবাস। তবে ব্রিটিশ আমলে বাগবাজার এলাকায় নারী শিক্ষার খুব একটা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা ছিল না। এই এলাকার ভূমিপুত্র ধীরেন্দ্রনাথ দে বিবেকানন্দের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত ছিলেন। তিনি লন্ডন থেকে রসায়নে পিএইচডি করে এসে ইংরেজদের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে দিয়ে নারী শিক্ষার জন্য ১৯৩৭ সালে বাগবাজারে কলকাতা মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। নারীর ক্ষমতায়ন সার্বিকভাবে প্রসার ঘটাতে কলকাতার উইমেন্স কলেজের বর্তমানে প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপিকা ড. অনুপমা চৌধুরী। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, তিনিও ভগিনী নিবেদিতার প্রতি নিবেদিত প্রাণ। স্বামী বিবেকানন্দ ও ভগিনী নিবেদিতার আদর্শের প্রতি তিনি অবিচল। কলকাতার ঐতিহ্যপূর্ণ উইমেন্স কলেজে প্রায় ৯ মাস হল তিনি যোগদান করেছেন প্রিন্সিপালের পদে। ভগিনী নিবেদিতা এই কলেজে প্রত্যক্ষভাবে সামাজিক কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নের ব্যাপারটিও তিনি গুরুত্বসহকারে দেখতেন। ব্রিটিশ ভারতে এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। পরাধীন ভারতে বিভিন্ন রকম প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে এই কলেজ বাংলার নারী শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। এই কলেজের আদর্শকে বৃহত্তর পরিসরে এগিয়ে নিয়ে যেতে অনুপমা দেবী অক্লান্ত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই কলেজের পঠন-পাঠনের মান উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক ও অর্থনৈতিক আলোর দিশা দেখানোর জন্য মাসের অধিকাংশ দিনই এখানে মননশীল সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে। ২৬ ও ২৭ এপ্রিল দুটি জাতীয় স্তরের সেমিনার এখানে অনুষ্ঠিত হয়। ২৬ এপ্রিল এই কলেজের অডিটোরিয়ামে ফ্লুইড ফিচার্স : শেপিং টুমরোজ ওয়াটার ল্যান্ডস্কেপ এর উপর একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। মুখ্য বক্তা ছিলেন প্রফেসর এন্ড স্কুল অফ ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রাক্তন ডিরেক্টর এবং প্রাক্তন ডিন, FISLM, যাদবপুর ইউনিভার্সিটি অধ্যাপক ড. পঙ্কজ কুমার রায়।
আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিচালক ড. বিভাস চন্দ্র বর্মন, মধ্যমগ্রাম বিবেকানন্দ কলেজ এর সহযোগী অধ্যাপিকা ড. বর্ণালী মিত্র সিনহা, আহ্বায়ক হিসেবে ছিলেন কলকাতা উইমেন্স কলেজ এর সহযোগী অধ্যাপিকা এবং ভূগোল বিভাগের প্রধান ড. মালবিকা বিশ্বাস রায়। বক্তারা বলেন, আসুন আমরা সবাই মিলে একযোগে এগিয়ে আসি। যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি, প্রতিটি সম্প্রদায় এবং প্রতিটি ইকোসিস্টেমের কাছে স্বচ্ছ, নিরাপদ এবং স্থিতিশীল জল উপলব্ধ হয়। কলেজের অধ্যক্ষা এবং সেমিনারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ড. অনুপমা চৌধুরী নারীদের নিরাপদ জল সম্বন্ধে সচেতন করিয়ে তাদের পৃথিবী পরিবর্তন করার জন্য ক্ষমতায়নের লক্ষ্যের উপর জোর দেন। তিনি আর ও বলেন, সার্বিক উন্নয়নের জন্য জল ব্যবস্থাপনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নারীদের সক্রিয় পদক্ষেপ অপরিহার্য। যখন মহিলারা জল সম্পর্কিত প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ করেন, তখন তাঁরা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, অগ্রাধিকার এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে আসেন, যা আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থিতিশীল জল ব্যবস্থাপনা অনুশীলনের দিকে পরিচালিত করে। কলকাতা উইমেন্স কলেজ মুক্ত শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। এই কলেজে ইগনু ও নেতাজি ওপেন ইউনিভার্সিটি সমান্তরালভাবে শিক্ষাদান করে চলে। কলকাতা উইমেন্স কলেজ এ ব্যাপারে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করে চলেছে। ২৭ এপ্রিল এন এস ও ইউ ইন্ডাকশন প্রোগ্রাম এই কলেজে অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও অন্যান্য রাজ্য থেকেও এই ইন্ডাকশন প্রোগ্রামে ছাত্রছাত্রীরা যোগদান করেন। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ড. সুদেষ্ণা চ্যাটার্জী বিশ্বাস (ডিরেক্টর, স্টাডি সেন্টার অ্যাডিশনাল চার্জ, জন রেজিস্টার একাডেমিক এন এস ও ইউ জয়েন্ট রেজিস্টার একাডেমিক এন এস ও ইউ), নীলাঞ্জনা চ্যাটার্জী (অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর, স্টাডি সেন্টার এন এস ও ইউ), ড. শ্রীদীপ মুখার্জী (এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এইচওডি ডিপার্টমেন্ট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন এস ও ইউ), ড. বর্ণনা গুহ ঠাকুরতা ব্যানার্জী (প্রফেসর, এইচওডি ডিপার্টমেন্ট অফ পলিটিকাল সায়েন্স ডিরেক্টর, স্কুল অফ সোশ্যাল সাইন্স এন এস ও ইউ) সহ অন্যান্যরা।