Khadi Mela
খাদি মেলা : এই প্রথমবার বিপুল পরিমাণ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প সামগ্রী বর্ধমান টাউন হল প্রাঙ্গনে
Bengal Times News, 5 March 2024
জগন্নাথ ভৌমিক, বর্ধমান : পূর্ব বর্ধমান জেলা খাদি মেলা শুরু হয়েছে বর্ধমান টাউন হল প্রাঙ্গনে। পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ এর আয়োজনে এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ এবং বস্ত্র দপ্তরের আর্থিক সহায়তায় ৪ মার্চ বিকেলে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। উপস্থিত ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামা প্রসন্ন লোহার। সহ-সভাধিপতি গার্গী নাহা, পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ এর সভাপতি তথা বিধায়ক কল্লোল খাঁ, বর্ধমান পৌরসভার পৌরপতি পরেশ চন্দ্র সরকার, পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ এর মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক নিমাই চন্দ্র হালদার, অতিরিক্ত জেলা শাসক (সাধারণ) অমিয় কুমার দাস, পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ এর সদস্য উজ্জ্বল প্রামাণিক, পূর্ব বর্ধমান জেলা আধিকারিক মানস কুমার গোস্বামী সহ অন্যান্যরা।
এই প্রথমবার পূর্ব বর্ধমান জেলার মানুষের কাছে বিপুল পরিমান খাদি বস্ত্র ও ক্ষুদ্র শিল্পজাত দ্রব্য পৌঁছে দিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ এবং বস্ত্র দপ্তরের অধীন পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ বর্ধমান শহরে প্রানকেন্দ্র টাউন হল ময়দানে আয়োজন করেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা খাদি মেলা ২০২৩-২৪। এই মেলা চলবে ১৫ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর ২ টা থেকে রাত্রি ৯ টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ খোলা থাকবে।
মেলা আয়োজকদের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ এবং বস্ত্র দপ্তরের অধীন একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা যা ১৫৫৯ সালে গঠিত হয় এবং ১৯৬০ সাল থেকে পথ চলা শুরু। চরকায় কাপাস তুলো থেকে হাতে সুতো কাটা হয় ও হস্ত চালিত তাঁতের সাহায্যে কাপড় বোনা হয়, এই কাপড়ই হলো খদ্দর বা খাদি। কাপাস তুলো ছাড়াও তসর ও রেশমের গুটি থেকে হাতে তৈরি সুতো দিয়ে, রেশম, তসর, গরদ, কেটিয়া, মটকা, বাপ্তা ইত্যাদি হাতে বোনা খাদি বস্ত্র উৎপাদিত হয়। প্রতিটি শিল্পী সমস্ত প্রক্রিয়াটি হাতে তৈরী করেন। উৎপাদনের উপর রাজ্য সরকার ভর্তুকি প্রদান করে থাকেন। মসলিন হলো সূক্ষ্ম খাদিবস্ত্র যা ১০০-৫০০ কাউন্টের সুতো দিয়ে তৈরী। অতিসূক্ষ মসলিন কাপড় একটি আংটির মধ্যে দিয়ে যেতে পারে। বিভিন্ন খাদি সংস্থা খাদি পর্ষদ বা কমিশন দ্বারা নিবন্ধিত হয়ে খাদি সুতো ও খাদি বস্ত্র উৎপাদন করে। হাতে বা সামান্য যন্ত্রের সাহায্যে তৈরী খাদি পর্ষদ, জেলা শিল্পকেন্দ্র ও হ্যান্ডলুম দপ্তরের সহায়তায় বেড়ে ওঠা খাদি ও গ্রামীণ শিল্প সামগ্রীর বিপণনের ব্যবস্থা করা হয়েছে এই মেলাতে। রাজ্যের গ্রামীণ শিল্পী ও খাদির কাটুনী এবং বয়নশিল্পীদের সাহায্যার্থে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার সাথে সাথে পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও জেলা খাদি মেলা ২০২৩-২৪ অনুষ্ঠত হচ্ছে।
এই মেলায় বিভিন্ন জেলা থেকে আগত খাদি ও গ্রামীণ শিল্প সামগ্রীর স্টলের সংখ্যা শতাধিক। এছাড়াও রয়েছে গ্রামীণ ক্লাস্টার হাব। বাংলার প্রায় প্রতিটি জেলার খাদির (সুতি, রেশম, তসর, গরদ, কেটিয়া, বাপ্তা, মসলিন, পশম) পোষাক থাকছে এই মেলাতে। গ্রামীণ শিল্পের নানান সামগ্রী, নতুন গ্রামের কাঠের পুতুল, বর্ধমান ও বীরভূমের কাঁথাস্টিচ, মুর্শিদাবাদের রেশম বস্ত্র, মেদিনীপুরের মাদুর শিল্প, মেদিনীপুরের পটচিত্র শিল্প। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন জেলার রকমারী উৎপাদিত গ্রামীণ শিল্প সামগ্রী।
মূলত কৃষিপ্রধান পূর্ব বর্ধমান জেলায় রাজ্য সরকারের সহায়তায় নতুন গ্রামে কাঠপুতুল, দরিয়াপুরে ডোকরা, কালনায় রাখি এবং বাতাসা ও কদমা, ভেদিয়ায় কাঁথাস্টিচ শিল্পের গুচ্ছ প্রকল্প গড়ে উঠেছে। অতি সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী-১ ব্লকে কচুরীপানা থেকে প্রস্তুত হস্ত শিল্পের গুচ্ছ প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন। সেখানে প্রায় ২ শতাধিক শিল্পী উপকৃত হবেন। পূর্বস্থলী ১ ব্লক এলাকার মিষ্টান্ন শিল্পে প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে খড় থেকে বিড়ে তৈরীর একটি গুচ্ছ প্রকল্প সম্প্রতি শিলান্যাস করেছেন রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। এই প্রকল্প থেকে প্রায় ১৫০ জন শিল্পী উপকৃত হবেন ও এলাকার আর্থ সামাজিক মানোন্নয়ন ঘটবে। পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রাম-২ ও পশ্চিম বর্ধমানে কাঁকসা অঞ্চলে শাল পাতার সামগ্রী তৈরীর প্রকল্প গড়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের পূর্ব বর্ধমান জেলা কার্য্যালয় ২৬ টি খাদি সংস্থার মাধ্যমে ৪৯০ জন কার্টুনি ও ১৩৫ জন বয়ন শিল্পীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এছাড়া নতুনগ্রামে কাষ্ঠশিল্প ক্লাস্টারের মাধ্যমে ২২০ জন শিল্পী, দরিয়াপুর ডোকরা শিল্প ক্লাস্টারের মাধ্যমে ১৫৬ জন শিল্পী, কালনার রাখি ক্লাস্টারের মাধ্যমে ৩৬০ জন শিল্পী, তেপান্তরে শাল লীফ ক্লাস্টারের মাধ্যমে ২১১০ জন শিল্পী, ভেদিয়া কাঁথা স্টীচ ক্লাস্টারের মাধ্যমে ৪৫০ জন শিল্পী ও তাদের পরিবার উপকৃত হয়েছে। বিভিন্ন শিল্পের উপর প্রশিক্ষণ দেবার ব্যবস্থা করেছে পর্ষদ। যেমন কৃত্রিমফুল ও গহনা শিল্পে ৫২ জন, বড়ি ও পাঁপড় শিল্পে ৫৩ জন, পাট ও অন্য তন্তুদ্বারা ব্যাগ শিল্পে ২৪ জন, কাঁথা শিল্পে ও সূচী শিল্পে ২১ জনকে। উৎকর্ষ বাংলার মাধ্যমেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উল্লেখ্য কচুরীপানা থেকে হস্তশিল্প সামগ্রী প্রস্তুত ও খড়ের বিড়ে তৈরী প্রকল্প ব্যাতীত অন্যান্য গুচ্ছ প্রকল্প গুলি সংশ্লিষ্ট সোসাইটির হাতে অর্পন করা হয়েছে এবং আশাকরা যায় কচুরীপানা থেকে হস্তশিল্প সামগ্রী প্রস্তুত ও খড়ের বিড়ে তৈরী প্রকল্পগুলি ও যথা সময়ে সংশ্লিষ্ট সোসাইটির হাতে অর্পন করা যাবে। সম্প্রতি পর্ষদের একটি দীর্ঘ প্রতিক্ষিত নিজস্ব বিপনন কেন্দ্র খোলা সম্ভব হয়েছে বর্ধমান শহরে স্পন্দন কমপ্লেক্সের ৮৯ নং স্টলে।