Folk song
বাংলা লোকগানের প্রসারে লোকসংগীত শিল্পীর উদ্যোগ
Bengal Times News, 29 March 2024
লুতুব আলি, পানিহাটি : বাংলা লোক গানকে জনপ্রিয় করে তোলার উদ্দেশ্যে উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে মাটির টানে-লোক গানের এক বর্ণময় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়। আয়োজক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লোকসংগীত শিল্পী গৌতম দে'র গুণমুগ্ধ ছাত্র-ছাত্রীরা ও অনুরাগী শিল্পী। মাটির টানে - লোক গানে এই প্রথমবার পানিহাটির বুকে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ঘিরে ব্যাপক উদ্দীপনার সঞ্চার হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক নির্মল ঘোষ, পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান মলয় রায়, ডিরেক্টর অফ স্টেট কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক ম্যানেজমেন্ট বিবেক সেন, ওয়েস্ট বেঙ্গল এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের অফিসার শিবানী দে, স্থানীয় কাউন্সিলর স্বপন দাস প্রমুখ। যাঁকে ঘিরে মাটির টানে-লোক গানের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার মধ্যমণি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লোকসংগীত শিল্পী গৌতম দে স্বয়ং। এই অনুষ্ঠানটি হয় পানিহাটি লোক সংস্কৃতি ভবনে। গুণমুগ্ধ ছাত্র-ছাত্রীদের অন্যতম অধ্যাপিকা ও বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী সুমিতা বৈরাগী পাত্র তাঁর সাবলীল কথনে অনুষ্ঠানটির উৎকর্ষতা আসে।
এক সাক্ষাৎকারে স্বনামধন্য লোকসঙ্গীত শিল্পী গৌতম দে এই প্রতিবেদক কে বলেন, লোকসঙ্গীত এর প্রসার ঘটানোর ব্যাপারে অমর শিল্পী অমর পাল, পূর্ণদাস বাউল প্রমূখদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১২০টি লোকসংগীত আছে তার মধ্যে সাধারণত ৭-৮ টি নিয়ে সঙ্গীতশিল্পীরা টানাটানি করেন। লোক সঙ্গীতই আদি সঙ্গীত। সমস্ত লোকসংঙ্গীত গুলিই রেওয়াজ ও চর্চা করা দরকার। এই লোকসঙ্গীত এর মধ্যেই অনেক অজানা দর্শন লুকিয়ে আছে। শিল্পীদের উচিত এই দর্শন গুলি দর্শক শ্রোতা ও জনমানসে আনা দরকার। প্রায় পাঁচ দশক ধরে গৌতম দে লোকসঙ্গীত গাইছেন ও চর্চার মধ্যে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। গৌতম বাবু মান্নাদের সঙ্গে একই মঞ্চে গান গেয়েছেন। কলকাতার এক অনুষ্ঠানে মান্না দে গৌতম বাবুর গান শুনে তারিফ করেছিলেন। গৌতম দে সমগ্র ভারতবর্ষ তো বটেই বিদেশেও এই লোকসঙ্গীতের প্রসার ঘটানোর জন্য তিনি ছুটে বেড়ান। অতি সম্প্রতি তিনি আমেরিকা থেকে অনুষ্ঠান করে এসেছেন। গৌতম বাবু আরও বলেন, পাশ্চাত্য দুনিয়ায় বাংলা লোকসঙ্গীত খুবই সমাদৃত। আমেরিকাতে বাংলার বিশিষ্ট আধুনিক ও হিন্দি গানের শিল্পীরা গিয়ে অনুষ্ঠান করেন। যেখানে লোকসঙ্গীত এর গান হয় সেখানে বিদেশীদের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মতো। পাশাপাশি আধুনিক ও হিন্দি গান এর অনুষ্ঠান হলে লোকসঙ্গীত এর দিকে বিদেশিদের ঝোঁক থাকে। বিদেশি শ্রোতারা লোকসঙ্গীত এর সুর, তাল, লয়ের প্রতি আকর্ষিত হন। লোক সঙ্গীতকে জনপ্রিয় করে তুলতে সিনেমা, টিভি সিরিয়ালে এবং সঙ্গীতের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান গুলিতে লোকসঙ্গীত কে বেশি করে ঢোকানোর জন্য গৌতম বাবু জোর দেন। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আগ্রাসন ভারতীয় সংস্কৃতির ওপর থাবা বসালেও গৌতম বাবুদের মত স্বনামধন্য শিল্পীদের প্রয়াসে বাংলা লোকসঙ্গীতের সুনাম ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি ঘটে চলেছে।
এই অনুষ্ঠানে গৌতম বাবুর একমাত্র সুযোগ্য কন্যা শ্রমণা দে সঙ্গীত পরিবেশন করে দর্শক-শ্রোতাদের মন জয় করেন। অন্যান্যদের মধ্যে সঙ্গীত পরিবেশন করেন আরতি দত্ত শীল, সোহিনী ব্যানার্জী, জয়দীপ চ্যাটার্জী, ডালি ঘোষ, সুবীর দাস, সমীর শীল, আশিস দত্ত, শিশু শিল্পী মায়ানকো দত্ত প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত ছাড়াও কবিতা আবৃত্তি, মননশীল আলোচনা হয়। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট সাংবাদিক মানস চক্রবর্তীর প্রয়াণে শোক জ্ঞাপন ও তাঁর বিদেহী আত্মার প্রতি সমবেদনা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে গৌতম দের অসংখ্য গুণমুগ্ধ ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিত হয়ে ছিলেন। সুমিতা বৈরাগী পাত্র এদিনের এই অনুষ্ঠান সঞ্চালনার পাশাপাশি কবিতা আবৃত্তি এবং সঙ্গীত পরিবেশন করে প্রশংসিত হন।