D L Roy
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের আদর্শকে ছড়িয়ে দিতে প্রয়াসী কবি বাচিক সাহিত্য পরিবার
Bengal Times News, 21 March 2024
লুতুব আলি, কলকাতা : "ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা" অথবা "বঙ্গ আমার! জননী আমার! ধাত্রী আমার! আমার দেশ" ইত্যাদি কালজয়ী গানের যিনি শ্রষ্ঠা তাঁর প্রাসঙ্গিকতা চিরকালের। জন্মের ১৬০ বছর পরেও দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বাঙালি তথা ভারতীয়দের কাছে সমানভাবে সমাদৃত। সঙ্গীত, কবিতা, উপন্যাস ও বিভিন্ন স্বাদের নাটক লিখে বাংলা সাহিত্যের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। পরাধীন ভারতে ডি এল রায়ের গান ও কবিতা স্বাধীনতা আন্দোলনে দারুণ ভাবে রেখা পাত করেছিল। বাংলার নবজাগরণে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান আছে। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ১৮৬৩ সালের ১৯ জুলাই নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের আদর্শকে ছড়িয়ে দিতে এবং গ্রাম গঞ্জের কবি সাহিত্যিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্মীদের একটি প্লাটফর্মে এনে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষ্ণনগরের সুশান্ত ঘোষ। সুশান্ত বাবু তাঁর সহধর্মিনী কৃষ্ণা ঘোষ কে নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী সংস্থা গড়ে তুলেছেন। সংস্থাটির নাম কবি বাচিক সাহিত্য পরিবার। কলকাতার নলিনী সভা ঘরে এই সংস্থাটির বার্ষিক অনুষ্ঠান হয়ে গেল। পুরোপুরি রাজনীতি মুক্ত এই প্রতিষ্ঠানে কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্মীরা স্বাধীনভাবে তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেন। সুশান্ত ঘোষ বলেন, কৃষ্ণনগরের দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বাঙালির গর্ব। বিপ্লবী যুগে তাঁর স্বাধীনচেতা লেখনি আজও স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। কবি বাচিক সাহিত্য পরিবারের লক্ষ্য : এই অমর কথা সাহিত্যিক দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মহৎ আদর্শকে বেশি বেশি করে নতুন নতুন সৃষ্টিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে তুলে ধরা। সেই সৃষ্টিতে যেমন থাকে বিজ্ঞান তেমনি থাকে সাহিত্য সংস্কৃতি ও সামাজিক দায়বদ্ধতা। কবি-বাচিক সাহিত্য পরিবার-সাহিত্য পত্রিকা নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। নবীন প্রতিভাকে পাদপ্রদীপের অঙ্গনে নিয়ে আসাই অন্যতম লক্ষ্য। মূলত বেজি খালি কবিবাসী সাহিত্য পরিবার ও ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ধারাবাহিকভাবে সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও সামাজিক কাজ করে এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে। গ্রাম গঞ্জে নীরবে নিভৃতে যারা সাহিত্য সাধনা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তাদেরকে বৃহত্তর আঙিনায় সংগঠিত করার জন্য আমরা ব্রতী হয়েছি। কলকাতার নলিনী সভা ঘরে সংস্থাটির বার্ষিক বর্ণময় অনুষ্ঠান সকলের মনকে স্পর্শ করে।
এই অনুষ্ঠানে তিনজন মহীয়সী নারী তথা বাচিক শিল্পী হালিশহরের মৌসুমী মজুমদার, শান্তিপুরের শুভ্রা ঘোষ, কল্যাণীর ড. সীমা রায় দের সংস্থার পক্ষ থেকে দশভূজা দুর্গা সম্মাননা দেওয়া হয়। এছাড়াও দ্বিজেন্দ্রলাল রায় স্মৃতি সম্মাননা প্রদান করা হয়। সমগ্র বছর ধরে যারা অন্নদাতা, অবহেলিত মানুষের পাশে থাকেন, পরিবেশ রক্ষার জন্য নিরন্তর আন্দোলন ও চারা গাছ বিতরণ করেন এমন একজন বিশিষ্ট সংগঠক, সকলের কাছে গাছ কাকু নামে পরিচিত চন্দ্রনাথ বসুকে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় স্মৃতি সম্মানে ভূষিত করা হয়।
অন্যান্যদের মধ্যে দ্বিজেন্দ্রলাল স্মৃতি সম্মাননা পান বিশিষ্ট কবি ও সংগঠক সাতকর্নি ঘোষ, একুশ শতকের নারী পত্রিকার সম্পাদিকা রানু রায়, পুরুলিয়ার বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক নরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, ডায়মন্ড হারবারের বিশিষ্ট কবি সম্পাদক শাকিল আহমেদ, বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক বরুণ চক্রবর্তী, বিশিষ্ট কবি সাংবাদিক মধুমিতা ধূত, বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী ও সংগঠক নন্দিনী লাহা, বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী মধুছন্দা তরফদার প্রমুখ। কবি-বাচিক সাহিত্য পরিবারের সম্পাদিকা বিশিষ্ট কবি কৃষ্ণা ঘোষ নীরবে এই পরিবারকে সাহচর্য ও সমৃদ্ধ করার জন্য প্রশংসিত হন। প্রায় শতাধিক কবি সাহিত্যিক, গুণীজনেরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই বর্ণময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন সন্ধ্যা ঘোষ, স্বপ্না রায়, করবী গোস্বামী, জলি সরকার, বাচিক শিল্পী অর্পিতা বিশ্বাস, দেবলীনা দাশগুপ্ত, জ্যোতি কণা মিত্র, রীনা মন্ডল, সুস্মিতা বিশ্বাস, রুপা লাহিড়ী, লক্ষ্মী ঘোষ, সংগীত শিল্পী সোমা চক্রবর্তী, সোমা সেনগুপ্ত, রুবি ভট্টাচার্য, লক্ষ্মী সমাদ্দার, নৃত্যশিল্পী রিমি রায়, চৈতি সেনগুপ্ত প্রমুখ। মফস্বল শহর ও গ্রামের কবি ও বাচিক শিল্পীদের সঙ্গে কলকাতার কবি, বাচিক শিল্পীদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন ঘটাতে কবি বাচিক সাহিত্য পরিবারের এই প্রয়াসকে সকলেই সাধুবাদ জানান।
এই অনুষ্ঠানে সংগঠনের প্রাণপুরুষ সুশান্ত ঘোষের ৬৫ তম জন্ম দিবস পালন করা হয়। প্রায় শতাধিক গুণীজনেরা এই অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে সুশান্ত বাবু, কৃষ্ণ ঘোষ ও কবি বাচিক সাহিত্য পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এই সংস্থার প্রতি দায়বদ্ধতা, সহনশীলতায় নিবেদিত প্রাণ সদস্য সদস্যরা পরিবারটিকে আরও বৃহত্তর পরিবার হিসেবে দেখতে পাওয়ার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে, সংগীত, কবিতা পাঠ ও মননশীল আলোচনা হয়।