Burdwan 108 Shib Temple
বর্ধমান ১০৮ শিব মন্দিরে মঙ্গল তোরণ, বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি স্থাপনে মন্দির এখন আকর্ষণীয়
Bengal Times News, 24 February 2024
জগন্নাথ ভৌমিক বর্ধমান : ধর্মীয় ভাবাবেগের মোড়কে বর্ধমান ১০৮ শিব মন্দির এখন বিশেষ ভাবে সেজে উঠেছে। ফলে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও অন্যান্য রাজ্য থেকে দর্শনার্থীরা প্রতিদিনই আসছেন বর্ধমান ১০৮ আট শিব মন্দিরে। আর এ কৃতিত্ব বর্তমান ট্রাস্ট বোর্ডের। ভারত জুড়ে এখন বর্ধমান ১০৮ শিব মন্দিরের খ্যাতি ক্রমশঃ ছড়িয়ে পড়েছে।
২৩৭ বছর আগে বর্ধমানের নবাবহাটে বহু অর্থ ব্যয় করে ১০৮ শিব মন্দির গড়েছিলেন মহারানি বিষণকুমারী। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধু সন্ন্যাসীদের এনে জাঁকজমক ভাবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তারপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে ১৯৫৫ সালে বর্ধমান আমলের অবসান ঘটেছে। মন্দির বর্ধমানের ঐতিহাসিক স্থাপত্য হিসেবে বিরাজ করলেও সংস্কারের প্রলেপ ছাড়া কিছুই হয়নি। গত এক দশকে ট্রাস্ট বোর্ডের কর্তারা বর্ধমান ১০৮ শিব মন্দির কে দেশের পর্যটক মানচিত্রে তুলে ধরতে উদ্যোগী হয়েছেন। নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা করে মন্দিরকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলার কাজে হাত দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই সে সমস্ত কাজ প্রায় সম্পন্ন। মন্দিরের প্রবেশ পথেই তৈরি হয়েছে সুদৃশ্য মঙ্গল তোরণ। আর এই কর্মযজ্ঞে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আধুনিক গ্রুপ। ২৩ ফেব্রুয়ারি দেশের ১০০ জন সাধু সন্ন্যাসীদের উপস্থিতিতে সেই মঙ্গল তোরণের অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।
সারা ভারত ভোলানন্দ গিরি আশ্রমের মন্ডলেশ্বর অসীমানন্দ সরস্বতী গিরি থেকে শুরু করে বর্ধমান বীরহাটা কালী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত পন্ডিত দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় সকলেই ছিলেন এদিনের অনুষ্ঠানে। ছিলেন আধুনিক গ্রুপের কর্ণধার মহেশ আগারওয়াল ও কান্ত আগারওয়াল সহ বর্ধমান ১০৮ শিব মন্দির ট্রাস্টের সহ-সম্পাদক গৌতম তা ট্রাস্টবোর্ডের সদস্য পূর্ব বর্ধমান জেলা আদালতের জিপি মুরারি মোহন কুমার ট্রাস্ট বোর্ডের কোষাধ্যক্ষ গুপ্তেশ্বর ভকত, সদস্য জিতেন মন্ডল, রাম প্রসাদ মাথুর, সুব্রত মন্ডল সহ অন্যান্যরা। এদিন সকাল থেকেই হোম যজ্ঞের পর সমগ্র মন্দির চত্বর পরিক্রমা করেন সাধু সন্ন্যাসীরা। এরপর নারকেল ফাটিয়ে মঙ্গল ঘট প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে মঙ্গল তোরণের উদ্বোধন হয়।
বর্ধমান ১০৮ শিব মন্দির ট্রাস্ট কমিটির সহ-সম্পাদক গৌতম তা জানান, এই ১০৮ শিব মন্দিরের মধ্যেই একটি মন্দিরের শিব লিঙ্গে রয়েছে পার্বতীর ছবি খোদাই করা আছে এটাকে সিঙ্গার গৌরী বলে। এই মন্দিরটিকে নির্দিষ্ট করতে মন্দিরের সামনে একটি শিব পার্বতীর মন্দির তৈরি করা হয়েছে, এটিকে পার্বতিপতি মন্দির বলা হয়।
মন্দির প্রাঙ্গণে মানত নন্দী পার্ক গতবছর উদ্বোধন হয়েছে। মন্দিরে ঢোকার মুখে ডানদিকে স্থাপিত হয়েছে শ্রীশ্রী সিদ্ধিদাতা গণেশের মূর্তি।
মন্দির প্রাঙ্গণে মুক্ত মঞ্চের উদ্বোধন আগেই হয়েছে। মন্দিরের সামনে সংস্কারের পর নবরূপে হরগৌরী মূর্তি, নটরাজ মূর্তির উন্মোচন হয়েছে। মন্দিরের ভিতরে স্থাপন করা হয়েছে রাধা কৃষ্ণ মূর্তি, বিষ্ণু, নারায়ন থেকে রাধা মাধবের বিভিন্ন রূপের ৮ টি মূর্তি।
সব মিলিয়ে পৌরাণিক ইতিহাসের খন্ডচিত্র ফুটে উঠছে বর্ধমান ১০৮ শিব মন্দির প্রাঙ্গণে। ফলে পর্যটকরা বেড়াতে এলে এখন পুজো দেওয়া থেকে শুরু করে সব কিছু ঘুরে দেখতে খুবই ভালো লাগবে এবং ঘন্টা তিনেক সময় সুন্দর ভাবে কেটে যাবে। শিশুরা পৌরাণিক দেব-দেবীর মূর্তি দেখে ইতিহাসের অনেক কিছু জানতে পারবে। ১০৮ শিব মন্দির এই মুহূর্তে বর্ধমানবাসী গর্ব ও অহংকারের নিদর্শন হয়ে উঠেছে।