বাংলাদেশে মহাসমারোহে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন
Bengal Times News, 22 February 2024
লুতুব আলি, পাবনা, বাংলাদেশ : বাংলাদেশ কবিতা সংসদ আয়োজিত দুই বাংলার কবি সাহিত্যিকদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চার দিনের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান নজর কাড়ে । চার দিনব্যাপী পাবনায় একুশের অনুষ্ঠানমালায় দুই বাংলার কবি সাহিত্যিকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের কবিতা সংসদ পাবনার প্রধান কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠান ঘিরে ব্যাপক উদ্দীপনার সঞ্চার হয়। বাংলাদেশ কবিতা সংসদের সভাপতি বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সাংবাদিক মানিক মজুমদার উপস্থিত সকলকে সম্ভাষণ ও স্বাগত জানান। উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের দাবিতে ১৪৪ ধারা ভেঙে ঢাকার রাজপথে ছাত্র-ছাত্রী, বুদ্ধিজীবীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেন। এই আন্দোলনরত মানুষদের ওপর পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্মমভাবে গুলি চালায়। ফলে অসংখ্য ছাত্র এই বর্বরোচিত আক্রমণে নিহত হন। উল্লেখযোগ্যরা হলেন, রফিক, জব্বার, শফিউর, সালাম, বরকত। এই ঘটনার ফলে সমগ্র পৃথিবী ব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারির দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করার জন্য শিলমোহর দেয়। অমর একুশের অনুষ্ঠানকে ঘিরে ঢাকা তো বটেই পাবনাতেও এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে সাজো, সাজো রব। একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানকে ঘিরে কোন কোন জায়গায় সপ্তাহ ব্যাপী অনুষ্ঠান চলে। বাংলাদেশ কবিতা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মানিক মজুমদারের সভাপতিত্বে দুই বাংলার কবি সমাবেশ ও গুণীজন সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন পাবনার সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স। উদ্বোধন করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাহিত্যিক ও গবেষক কবি মজিদ মাহমুদ। বিশেষ অতিথির আসন অলংকৃত করেন শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট সমাজসেবী অধ্যক্ষ মাহাতাব উদ্দিন বিশ্বাস। পাবনা পৌরসভার মেয়র শরীফ উদ্দিন প্রধান।
অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক উৎপল মির্জা, দৈনিক সিনসার সম্পাদক এস এম মাহবুব আলম, বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সমাজসেবক অধ্যাপক ডা: ইফতেখার মাহমুদ, শহীদ আমিনুদ্দিন আইন কলেজের অধ্যক্ষ মরমী কবি আজিজুল হক, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদ আব্দুল করিম, কবি শাওন সগির সাগর এর প্রাণবন্ত আবৃত্তি দর্শক-শ্রোতাদের নজর কাড়ে। ভারত, বাংলাদেশের আগত কবিরা স্বরচিত কবিতা পাঠ ও কবিতা আবৃত্তি করেন। সংগীত পরিবেশন করেন উত্তম কুমার দাস প্রমুখ শিল্পীরা। আমন্ত্রিত কবি সাহিত্যিকদের সমন্বয়ে রিজার্ভ বাস সহযোগে চরনিকেতন বিশ্ব কুঠির মিলনায়তনে গিয়ে শোভাযাত্রা, সাহিত্য আড্ডা, মননশীল আলোচনা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক ২০২৪ এবং ৫ জনকে একুশে স্মারক সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।
সম্বর্ধিত ব্যক্তিরা হলেন, মাহতাব উদ্দিন বিশ্বাস, অধ্যাপক ডাঃ ইফতেখার মাহমুদ, বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক ও আমার ভারত আন্তর্জাতিক পত্রিকার সম্পাদক আব্দুল করিম, শিশু সাহিত্যিক কবি নিত্যগোপাল বিশ্বাস, নড়াইল শিশু সাহিত্যিক কলকাতা ভারত, মধুসূদন মজুমদার, পাবনা ধর্মীয় সাহিত্যে একুশে স্মারক সম্মাননা ২০২৪ পেলেন শাওনসগীর সাগর, ভাস্কর্য চিত্রশিল্পী, মানিকগঞ্জ মিথিলা মুখোপাধ্যায়, শ্রুতিনাট্য শিল্পী, কলকাতা, ভারত, শাহানা আক্তার বানু কবি ও উপন্যাসিক পাবনা, রঞ্জনা ভঞ্জ শ্রুতিনাট্য শিল্পী কলকাতা ভারত, হাসিবুর রহমান পিন্টু, কাব্য সাহিত্যে রাজশাহী, উত্তম কুমার দাস চারণ কবি ও কন্ঠ শিল্পী পাবনা, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মাজাহারুল ইসলাম, পরিচালক এবং ওসাকা ডক্টর মনছুর আলম, কবি ও সাংবাদিক এসএম রাজা, লেখক সাজেদুল হক নিলু চেয়ারম্যান, কবি মোকলেস মুকুল প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনের আদলে পাবনা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে চরগড় গড়িতে বরেণ্য কবি মজিদ মাহমুদ গড়ে তুলেছেন চরনিকেতন শিক্ষা পল্লী। এখানেও বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংসদের সাধারণ সম্পাদক জেবুন্নেছা ববিন, বাচিক শিল্পী শাওন সগির সাগর সভাপতি মানিক মজুমদার। কুড়ি ফেব্রুয়ারি পাবনার দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন ও সন্ধ্যায় মাসব্যাপী বইমেলায় অংশগ্রহণ। ২১ ফেব্রুয়ারি ছিল প্রভাত ফেরি করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও প্রয়াত কবি সাহিত্যিকদের মাজার জিয়ারত দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান ও ৭২ তম শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল অনুষ্ঠান।
আমার ভারত আন্তর্জাতিক পত্রিকার সম্পাদক ও বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক আব্দুল করিম অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্মরণ করিয়ে দেন যে, ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন এর কথা সেদিন সূচনা হয়েছিল বাঙালী এবং বাংলা ভাষাকে দুর্বল করার সিদ্ধান্ত ১৯৪৭ সালে দ্বিখন্ডিত করনের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা পতাকা ওড়ানো সম্ভব হয়েছিল। বাংলাকে বিভাজনের মধ্য দিয়ে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন ভারতের কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে ইংরেজি মাধ্যমে বাংলা ভাষা পড়ানো হয় না। বাংলাদেশের পাবনা থেকে এই দুঃখের কথা বর্ণনা করেন। তিনি প্রত্যেকটি সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ে বাংলা ভাষাকে একটি ভাষা হিসেবে রাখার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।