Centenary of Neturpur Primary School
সারেঙ্গার নেতুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান
Bengal Times News , 25 January 2024
জগন্নাথ ভৌমিক, বাঁকুড়া : একশ বছর আগে সারেঙ্গার প্রত্যন্ত নেতুরপুর গ্রামে তৎকালীন কিছু শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের হাতে তৈরি হয়েছিল একটি টোল। পরে সেই টোলের নাম রাখা হয় নেতুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেই বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন ও পুনর্মিলন উৎসব মহাসমারোহে উদযাপিত হলো। উনিশে জানুয়ারি নেতুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উদযাপন ও পুনর্মিলন উৎসবের সূচনা করেন রামকৃষ্ণ শিবানন্দ আশ্রমের (কেলাতি) প্রতিষ্ঠাতা সচিব স্বামী রাঘবানন্দজী মহারাজ। উপস্থিত ছিলেন খাতড়া মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কাশীনাথ মিস্ত্রি। বৈদিক মন্ত্র পাঠ ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন রাঘবানন্দজী মহারাজ। সারেঙ্গার নেতুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন ও পুনর্মিলন উৎসব উপলক্ষে শ্রীধরপন্ডা ও পঞ্চানন পন্ডা মঞ্চে শতবর্ষ পূর্তি স্মরণিকা প্রকাশিত হলো। স্মরণিকা প্রকাশ করেন জাতীয় শিক্ষক জগবন্ধু মাহাত ও রাইপুর বিধানসভার বিধায়ক মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু। ছিলেন বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সারেঙ্গা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা: বিশ্বরূপ সনগিরি। তিনি উপস্থিত অভিভাবক অভিভাবিকাদের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু সচেতনতার বার্তা দেন। বিনা মূল্যে স্বাস্থ্য শিবিরে দেড় শতাধিক মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। স্বাস্থ্য শিবিরে জীবন সুরক্ষা হাসপাতালের ইউনিট টু এর ডাক্তার বাবু ও নার্সরা উপস্থিত ছিলেন। শিবিরের দ্বিতীয় দিনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সদস্যা সুপর্ণা মন্ডল, বিশিষ্ট সমাজসেবী স্বপন মন্ডল, বিশিষ্ট সমাজসেবী ও সারেঙ্গা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুব্রত মিশ্র, সারেঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুভাষ মাইতি, জামবনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার সিনহা সহ বিশিষ্ট মানুষজন। শুরুতেই সকলকে স্বাগত জানান, নেতুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তথা পুনর্মিলন উৎসব কমিটির সম্পাদক সাধন কুমার মন্ডল।
এদিন ছাত্র-ছাত্রীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও বাঁকুড়ার এক নাট্যগোষ্ঠীর পরিচালনায় পুতুল নাচ পরিবেশিত হয়। যা দেখতে ২ হাজারেরও বেশি মানুষ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে হাজির হয়েছিলেন। সমগ্র অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন ও পুনর্মিলন উৎসব কমিটির সভাপতি সত্য কিঙ্কর পন্ডা। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য জেলার সমস্ত প্রশাসনের জেলা আধিকারিক সহ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছা বার্তা পেয়েছে নেতুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় শতবর্ষ উদযাপন কমিটির স্মরণিকায় যা একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে এলাকাবাসী দাবি করেন। বাঁকুড়া জেলা সমগ্র শিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক শুভঙ্কর দাস সস্ত্রীক বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন। তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন নেতুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় জেলার একটি গর্বের বিদ্যালয়। যার শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। তাছাড়া এই বিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও সবজি বাগান থেকে শুরু করে শ্রেণিকক্ষ গুলি ছাত্রছাত্রীদের মনোগ্রাহী করে তুলতে যেভাবে সাজানো হয়েছে তা দৃষ্টান্ত। জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকায় তিন দিন ধরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গ্রামবাসীদের উদ্যোগে শতবর্ষ উদযাপন পালন করতে গেলে বুকে যথেষ্ট বল ও সাহস দরকার যা নেতুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় দেখিয়ে দিল। বিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও আতিথেয়তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাঁকুড়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক জগবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন এই বিদ্যালয় থেকে অনেক কিছু শিক্ষা নিয়ে গেলাম ভাবতে পারিনি প্রত্যন্ত এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এত সুন্দর পরিবেশ রয়েছে। তাছাড়া তিনদিনের এই সৃজনশীল অনুষ্ঠান এলাকাবাসীর সাথে আমাদেরও মুগ্ধ করেছে। বিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকে শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন ও পুনর্মিলন উৎসবের স্মরণিকা প্রকাশ করেন জাতীয় শিক্ষক জগবন্ধু মাহাতো বলেন নেতুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল যা আমাদের বিদ্যালয়গুলোর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সমগ্র শিক্ষা মিশনের বাঁকুড়া জেলার অন্যতম আধিকারিক তরুণ কান্তি ভূষণ, সারেঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মৌসুমী সিংহ মহাপাত্র, সারেঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুভাষ মাইতি, মৎস্য প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ অজিত দাস ধীবর, শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ কল্যাণ প্রসাদ মল্লিক, বিশিষ্ট সমাজসেবী তারাশঙ্কর মহাপাত্র, সারেঙ্গা সরকারি প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষ সাধন মহান্তি, সারেঙ্গা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাক্তার বিশ্বরূপ সনগিরি, সারেঙ্গা থানার আইসি সুজিত ভট্টাচার্য নেতুরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রাজু লোহার, বিশিষ্ট জ্যোতিষ শাস্ত্রী পন্ডিত উজ্জ্বল কান্তি সিদ্ধান্ত শাস্ত্রী, পন্ডিত দীপ্তিমান বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষারত্ন পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক পরীক্ষিত কামিল্যা, জামবনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উজ্জ্বল কুমার মল্লিক, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার সিনহা, কৃষ্ণপুর গোয়ালডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার মন্ডল, বিশিষ্ট লোক কবি ও নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন এর খাতড়া শাখার সচিব চণ্ডীচরণ দাস, বিশিষ্ট সাংবাদিক কার্তিক ঘোষ, সঞ্জয় ঘটক, স্বরূপ সনগিরি, গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যা চিত্ররেখা পাঠক সহ বিশিষ্ট মানুষজন।
তিনদিন ধরে বিভিন্ন সংস্কৃতি অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী সারেঙ্গা মিউজিক কলেজ এর ছাত্র-ছাত্রীরা অংশ গ্রহণ করে। আকর্ষণীয় হিসেবে ছিল পুতুল নাচ ও কলকাতার সুবর্ণরেখা নাট্যগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাটক ভূসুনডির মাঠে। তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠানে সুবর্ণরেখা নাট্যগোষ্ঠীর উপস্থাপনা এত সুন্দর ছিল যে দর্শকরা টের পেলেন না কখন নাটকের দৃশ্যপট শেষ হয়ে গেছে। ঐদিন পুনর্মিলন উৎসবে বহু প্রাক্তনী হাজির হয়েছিলেন। উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে তাদের সংবর্ধনা জানানো হয়। তারা তাদের স্মৃতিচারণা করেন। দুইদিন ধরে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য শিবির ও চক্ষু পরীক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত হয় প্রথম দিন জীবন সুরক্ষা হাসপাতাল ইউনিট টু এর ডাক্তার বাবুরা দুই শতাধিক রোগীর বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ইসিজি, সুগার টেস্ট, ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা ইত্যাদি করেন। দ্বিতীয় দিন আলোলিকা নার্সিংহোম এর বিশিষ্ট চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অনুপ মন্ডলের সাহায্যকারী ডাক্তার বাবুদের পরিচালনায় বিনামূল্যে চক্ষু পরীক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে চোখের রোগের প্রয়োজনীয় ওষুধ শতাধিক রোগীকে বিনামূল্যে দেওয়া হয় । তিন দিনের এই অনুষ্ঠানটিকে সাফল্যমন্ডিত করতে গ্রামবাসী ও প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী এবং নেতুরপুর অগ্রদূত ক্লাবের সদস্য সদস্যারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনদিনের জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ঘিরে গ্রামবাসী সহ এলাকাবাসীর মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পুতুল নাচ ও নাটক দেখতে হাজার হাজার মানুষ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে হাজির হন।