ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া ও ভাইফোঁটার মাহাত্ম্য
Bengal Times News, 22 October 2025
জগন্নাথ ভৌমিক : "ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা/ যমুনা দিল যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা"। এই উদ্ধৃতির মাহাত্ম্য অপরিসীম। কারণ যম যেমন অমর, একই ভাবে সব বোনেরা চায় তার ভাই বা দাদা যেন দীর্ঘায়ু হয়। বঙ্গ জীবনের অঙ্গ হিসাবে সারা বছরে যে উৎসব গুলি বঙ্গ জীবনে অমলিন তার মধ্যে অবশ্যই একটি এই ভাইফোঁটা। যদিও ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া উৎসব বঙ্গ জীবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। পশ্চিম ভারত থেকে উত্তর ও দক্ষিণ ভারত উত্তর পূর্ব ভারত, নেপাল, বাংলাদেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানের প্রচলন আছে।
ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় শুদ্ধাচারে তার কপালে চুয়া-চন্দনের ফোঁটা এঁকে দেয় বোন। বাম হাতের কড়ি আঙুল থাকে ভাইয়ের কপালে আর ঠোঁটে থাকে চিরন্তন সেই চার লাইনের উদ্ধৃতি।
কিন্তু কে এই যম ? আসলে যম হলেন ধর্মরাজ। যমকে যমুনা (যমের বোন) ফোঁটা দিয়েছিলেন। কপালে তিলক কেটে যমের মঙ্গল কামনা করেছিলেন। এই শুভ দিনটিতে ভগিনী দ্বারা ভাইয়ের পূজা হয় কপালে তিলক কেটে, ভাইয়ের মঙ্গল কামনায়। ছোট ভাই হলে ধান-দূর্বা দিয়ে বড় বোন আশীর্বাদ করে, দীর্ঘায়ু কামনা করে। আর বড় ভাই হলে প্রণাম করে ধান-দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ গ্রহণ করে বোন।
এই দিনটি ভাই বোনের মিলনের দিন হিসাবে প্রাচীনকাল থেকে পালিত হয়ে আসছে। রাত পোহালেই সেই ভাইফোঁটা। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী হিন্দু জনজাতির মধ্যে ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানের প্রচলন রয়েছে। তবে বর্তমানে বহু মুসলমান সম্প্রদায়ের ভাইদেরও ধর্মীয় বেড়াজাল টপকে হিন্দু বোনের হাতে ফোঁটা নিতে দেখা যায়।
কিন্তু কি ভাবে শুরু হল এই ভাইফোঁটা ? জানা যায়, সূর্যদেবের তিন পত্নী – সংজ্ঞা, প্রভা ও রজনী। সংজ্ঞা ও সূর্যদেবের দুই পুত্রের নাম মনু আর যম৷ আর কন্যা যমুনা। 'মৎস্যপুরাণ' গ্রন্থমতে, মনুর উত্তরসূরিরাই মানুষ। পরবর্তীকালে যমুনার সঙ্গে বিয়ে হয় শ্রীকৃষ্ণের অগ্রজ বলরামের। দিনটি ছিল সেই কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথি। বিয়ের আগে ভাইদের কপালে ফোঁটা দিয়ে তাঁদের মঙ্গলকামনা করেছিলেন যমুনা। সেই থেকেই ভাইফোঁটার প্রচলন।
কোথায় কী নামে পরিচিত এই 'ভাইফোঁটা' ?ভাইফোঁটা বাঙালির কাছে 'ভ্রাতৃদ্বিতীয়া' বলেও পরিচিত। পশ্চিম ভারতে এই উৎসব 'ভাইদুজ' নামেও পরিচিত। আবার মহারাষ্ট্র, গোয়া ও কর্ণাটকে ভাইফোঁটাকে বলে 'ভাইবিজ'। নেপালে ও পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলে এই উৎসব পরিচিত 'ভাইটিকা' নামে। সেখানে বিজয়া দশমীর পর এটিই সবচেয়ে বড় উৎসব। এই উৎসবের আরও একটি নাম হল 'যমদ্বিতীয়া'।


