কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের সম্বর্ধনায় বর্ধমান সায়েন্স এন্ড নেচার ক্লাব
Bengal Times News, 29 June 2025
বেঙ্গল টাইমস নিউজ, বর্ধমান : শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির শহর বর্ধমান। সেই সুদূরকাল থেকে অদ্যাবধি তার বহু নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে বর্ধমান জেলায়। তারই উত্তরসূরী হিসাবে ২৯ জুন "বর্ধমান সায়েন্স এন্ড নেচার ক্লাব" এর পক্ষ থেকে বর্ধমান মিউনিসিপাল হাই স্কুলের রাজেন্দ্র ভবনে মহাসমারোহে পালন করা হল কৃতী ছাত্রছাত্রীদের সম্বর্ধনা উৎসব। এই সম্বর্ধনা উৎসবে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক গাছ মাস্টার অরূপ চৌধুরী, জাতীয় শিক্ষক তথা শিক্ষারত্ন পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক সুভাষচন্দ্র দত্ত, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সমাজকর্মী জগন্নাথ ভৌমিক এবং মিউনিসিপাল হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরুনাভ চক্রবর্তী।
প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং রবীন্দ্র প্রতিকৃতিতে মাল্যদানের মধ্য দিয়ে এই উৎসবের শুভ সূচনা হয়। পুষ্পস্তবক, উত্তরীয়, মেমেন্টো এবং সবুজপ্রাণ চারা গাছ দিয়ে এই অনুষ্ঠানের অতিথিদের সাদরে বরণ করে নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে অসাধারণ সংগীত পরিবেশন করে সকলের মন জয় করে নেয় নবম শ্রেণির ছাত্রী অদ্রিকা সাহা। তারপর ব্রতজিৎ দাসের স্বরচিত কবিতা এবং সুচিস্মিতা সাহার রবীন্দ্র নৃত্য পরিবেশন সবাইকে মুগ্ধ করে। সায়েন্স এন্ড নেচার ক্লাবের পক্ষ থেকে মোট ৪১ জন ছাত্র-ছাত্রীকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়।
যার মধ্যে মাধ্যমিকে সপ্তম স্থানাধিকারী পাপড়ি মন্ডল এবং উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম স্থানাধিকারী রূপায়ণ পাল সহ ISC বোর্ডের অল ইন্ডিয়ায় দ্বিতীয় স্থানাধিকারী অন্তরা দাঁ ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন উচ্চমাধ্যমিকে ষষ্ঠ, সপ্তম এবং দশম স্থানাধিকারী যথাক্রমে জয়দেব পাল, শুভম পাল এবং অর্ক ব্যানার্জী সহ একাধিক ছাত্র-ছাত্রী যারা মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং ইংরেজি বোর্ড পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। সায়েন্স এন্ড নেচার ক্লাব এর পক্ষ থেকে প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে প্রথমেই চন্দনের ফোঁটা, উত্তরীয় এবং পুষ্প স্তবক দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। তারপর প্রত্যেকের হাতেই একটি করে ব্যাগ, বই, মেমেন্টো, সার্টিফিকেট, গাছ এবং মিষ্টির প্যাকেট তুলে দেওয়া হয়।
এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে গাছ মাস্টার অরুপ চৌধুরী বলেন, "ছাত্র জীবনে আপনাকে জানা এবং পিতা মাতাকে মানা খুবই জরুরী। ডিগ্রি অর্জন করার থেকেও মানুষের মত মানুষ হওয়া বড় প্রয়োজন। উপস্থিত কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে আমি এটা আশা করতেই পারি। "এরপরে তিনি ছাত্র -ছাত্রীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে সমাজসেবার কাজে তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বৃক্ষ রোপনের মধ্য দিয়ে এ বিশ্বকে দূষণমুক্ত করার আবেদন জানান।
কাঞ্চননগর ডি. এন.দাস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা জাতীয় শিক্ষক সুভাষচন্দ্র দত্ত বর্তমান দিনে AI এর গুরুত্ব কতখানি তা ছাত্রছাত্রীদের তুলে ধরেন এবং ভবিষ্যতে পেশা ও নেশা হিসেবে এ বিষয়টিকে ভেবে দেখার আবেদন জানান। বিশিষ্ট সাংবাদিক জগন্নাথ ভৌমিক ছাত্র ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কৃতিদের অধিকাংশ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার পড়তে চলে যায়। তবে ভালো ছেলে মেয়েদের ডব্লিউবিসিএস, আইএএস, আইপিএস, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, জার্নালিজম এবং বানিজ্যিক বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশোনা করতে এগিয়ে আসা উচিত। গতানুগতিক বিষয়গুলোর বাইরে বিকল্প পথগুলি ছাত্রদের ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ জানান এবং আগামী দিনে তারা যেন দেশ ও জাতির জন্য কাজ করে, এ ব্যাপারে তিনি উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহিত করেন।
এর মাঝে কথায়, সুরে এবং কবিতার ছন্দে অরুণাভ চক্রবর্তী তার শিক্ষক জীবনের লব্ধ অভিজ্ঞতা এবং ছাত্রদের ঘিরে তার আশার কথা ব্যক্ত করেন।
বর্ধমান সায়েন্স এন্ড নেচার ক্লাবের প্রেসিডেন্ট বিশ্বরূপ দাস জানান "সায়েন্স এন্ড নেচার ক্লাব সারা বছর ধরে নানান সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড করে থাকে। এছাড়াও প্রতিদিন whatsapp গ্রুপের মাধ্যমে অনলাইনে বহু ছাত্র-ছাত্রীকে পঠন-পাঠনের বিষয়ে বিশেষভাবে সহায়তা করা হয়। তাদের সমস্যার সমাধান করে দেন সংগঠনের সদানিষ্ঠ শিক্ষক শিক্ষিকারা।" তিনি আরও জানান "পরিবেশ উন্নয়ন আমাদের ধর্ম, শিক্ষা সংস্কৃতি এবং পঠন পাঠন আমাদের কর্ম। সংগঠনের প্রতিটি শিক্ষক-শিক্ষিকা এই মহতী ব্রত পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ "। সব নিয়ে এই অনুষ্ঠান ছিল সত্যিই চোখে পড়ার মতো।
অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে যারা সাহায্য করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক হিমাদ্রি শেখর দে, অয়ন কুমার মল্লিক, অনিমেষ সাহা, সূর্যদেব ঘোষ, ধীমান মাল, নয়ন চক্রবর্তী, বিশ্বনাথ দত্ত, অলোক বিশ্বাস, অরিজিৎ পান্ডে প্রমুখ।