E-WASTE management
বৈদ্যুতিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সম্মেলনে কাজের নিরিখে বর্ধমানের বিভিন্ন সংস্থা ও বিদ্যালয় পুরস্কৃত
Bengal Times News, 29 November 2024
জগন্নাথ ভৌমিক, বর্ধমান : বৈদ্যুতিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সম্মেলন আয়োজিত হল বর্ধমানে। জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ স্বীকৃত কলকাতার বেসরকারী বর্জ্য ব্যবস্থাপক সংস্থা হুলাডেক রিসাইক্লিং এর উদ্যোগে এবং স্টার্ট আফ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় বর্ধমান শহরের অভিজাত রেষ্টুরেন্ট নক্ষত্র 2.0 -তে আজ জেলার ইলেকট্রনিক বর্জ্য সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কর্মশালার পাশাপাশি বিগত সময়ে সঠিকভাবে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বা সচেতনতায় যারা বিশেষ অবদান রেখেছে তাদের সম্মানীত করা হয়। উপস্থিত ছিলেন হুলাডেক এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর নন্দন মাল, মার্কেটিং ম্যানেজার দেবপিথা হালদার, স্টার্ট আফ ফাউন্ডেশনের পূর্ব বর্ধমান জেলার চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সন্দীপন সরকার, চিফ এক্সিকিউটিভ পার্থ প্রতিম মিত্র, সেন্টার ইনচার্জ সত্যজিৎ ঘোষ।
এদিনের বৈদ্যুতিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সম্মেলনে অংশ নেন তেজগঞ্জ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ কুমার চক্রবর্তী, পরিবেশ কর্মী প্রিয়ব্রত পাঁজা, কাঞ্চন নগর দিনোনাথ দাস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ডঃ সুভাষচন্দ্র দত্ত, সাদিপুর ডি এস স্মৃতি বিদ্যানিকেতন এর প্রধান শিক্ষক সৌমেন্দ্রনাথ পাল, কৈচর ষোড়শীবালা বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা গার্গী সামন্ত, বর্ধমান রাজ কলেজের এন এস এস প্রোগ্রাম অফিসার ডঃ ওম শঙ্কর দুবে, দুর্গাপুরের জামুয়া ভাদু বালা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আইনুল হক, রোটারী ক্লাব অফ বর্ধমান অ্যামেনিটি'র প্রেসিডেন্ট মীনু দাস, ডাঃ পল্লবী মাজি, ডঃ শীর্ষেন্দু দত্ত, সুদীপ আগরওয়াল, আকাশ কান্ডেলওয়াল, বিভাস প্রামাণিক, দেবজ্যোতি হাজরা সহ অন্যান্যরা।
হুলাডেক এর তরফে উদ্যোগপতি নন্দন মাল জানান, "প্রাক দীপাবলিতে বিশেষ অভিযানে রাজ্যের নিরিখে সর্বোচ্চ পরিমাণ (২১০২কেজি) ই-বর্জ্য সংগ্রহের জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিভাগে স্টার্ট আপ ফাউন্ডেশন পুরস্কৃত হয়"। এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে বিগত ৬ মাসে পূর্ব বর্ধমান জেলার ৯৭টি স্কুল সহ অনান্য জেলার আরো ৪৭ স্কুলে ক্রমাগত কর্মশালা আয়োজন করে বলে সংস্থার তরফে সন্দীপন সরকার জানান। জেলায় ওই একই ক্ষেত্রে বিদ্যালয় বিভাগে 'সড্ড্যা হাই স্কুল' ও 'সাদিপুর ডি. এস. স্মৃতি বিদ্যানিকেতন' এবং সম্প্রদায় বিভাগে 'আর.সি.এ. বর্ধমান' পুরস্কৃত হয়। ব্যাক্তিগত বিভাগে সৌম্যদীপ ঘোষ। মহম্মদ ইয়াসিন সেখ ও রাজ ঘোষ পুরস্কার পায়। এছাড়াও সাতটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও কয়েকজন ব্যাক্তিবর্গ সম্মানীত হয় জেলার বৈদ্যুতিন বর্জ্য সমস্যার নিষ্পত্তিতে অন্যতম অবদান রাখার জন্য। সন্দীপন সরকার আরো জানান, পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনকেও বিনামূল্যে বৈদ্যুতিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করার ব্যাপারে তাদের তরফে লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়িত হলে জেলার ই-বর্জ্য সমস্যায় কার্যকরী পদক্ষেপ হবে বলেই মনে হয়।
স্টার্ট আফ ফাউন্ডেশনের পূর্ব বর্ধমান জেলার চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সন্দীপন সরকার বিভিন্ন প্রকার সমীক্ষা রিপোর্ট, ইন্টারনেট এবং জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দেওয়া তথ্য উল্লেখ করে বলেন, সারা বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা তথা এই দেশ ও রাজ্যে উত্তর উত্তর বাড়ছে ইলেকট্রনিক বর্জ্য , ২০২০ সালের সমীক্ষা বলছে সে বছর প্রায় ৫০ মিলিয়ন মেট্রিক টন ই-বর্জ্য উৎপাদন হয় বিশ্ব জুড়ে, যা ২০৩০ সালে আনুমানিক ৮০ মিলিয়ন মেট্রিক টন অবধি প্রতি বছরে পৌঁছাতে পারে, বৈদ্যুতিন বর্জ্য তৈরীতে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে ভারত , প্রতি বছর প্রায় ৩.২ মিলিয়ন মেট্রিক টন ই-বর্জ্য তৈরী করে, শীর্ষে রয়েছে চীন, যাদের বাৎসরিক বৈদ্যুতিন বর্জ্য উৎপাদন আনুমানিক ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টন, দ্বিতীয় স্থানে আমেরিকা প্রায় ৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন ই-বর্জ্য প্রতি বছর তৈরী হচ্ছে, চতুর্থ ও পঞ্চমে যথাক্রমে জাপান ও ব্রাজিল , ২.৫ ও ২ মিলিয়ন মেট্রিক টন করে ই-বর্জ্য তৈরী করে, আমরা যদি প্রতি বর্গকিমি তে ই-বর্জ্য উৎপাদনের পরিমান দেখি তাহলে সবথেকে ভয়ানক অবস্থায় রয়েছে জাপান, সে দেশের প্রতি বর্গ কিমি তে প্রায় ৭ টন বৈদ্যুতিন বর্জ্য প্রতি বছর জমা হয়, ভারত আর চীন সেদিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় , প্রতি বছর ভারত ও চিনে প্রতি বর্গ কিমিতে প্রায় ১ টন বৈদ্যুতিন বর্জ্য তৈরী হচ্ছে ; প্রতি বছর ভারতের প্রতি ব্যাক্তি গড়ে ২.৫কেজি বৈদ্যুতিন বর্জ্য তৈরী করে বলেই সমীক্ষায় প্রকাশ, আশ্চর্য হলেও সত্যি গত ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিকের স্বর্ণ রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ সকল পদক তৈরীই হয়েছিল এই সকল ই-বর্জ্যে থাকা ধাতু থেকে , ১ টি পদক বানাতে কয়েক হাজার কম্পিউওটার মাদারবোর্ড বা টিভির প্যানল বোর্ডের প্রয়োজন , তাহলে সমগ্র আবর্জনার পরিমাণটি একবার ভাবুন যেখান থেকে এই পদক বানানো সম্ভব হয়েছে , ৬২ লক্ষ মোবাইল সহ কয়েক লক্ষ ল্যাপটপ, ডিজিটাল ক্যামেরা ও অনান্য বৈদুতিন বর্জ্য যার ওজন প্রায় ৭৮,৯৮৫ মেট্রিক টন , তা থেকে ৩২ কেজি সোনা, ৩৫০০ কেজি রুপো ও ২২০০ কেজি ব্রোঞ্চ নিষ্কাষিত হয়, যেগুলি থেকে প্রায় ৫০০০ টি মেডেল তৈরী করা হয় অলিম্পিক ও প্যারা অলিম্পিকের জন্য , ভারতে উৎপাদিত বৈদ্যুতিন বর্জ্যের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ সপ্তম স্থানে, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লী কর্ণাটক ও গুজরাটের পরই প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন বৈদ্যুতিন আবর্জনা জমা হচ্ছে আমাদের রাজ্যে , যদিও এখন পঞ্চমে উঠে এসেছি, কোলকাতা ১৫ হাজার মেট্রিক টন প্রতি বছর বাতিল বৈদ্যুতিন সামগ্রীর তৈরী করে রাজ্যে শীর্ষে, তারপরই দ্বিতীয় হাওড়া, উৎপাদন প্রায় ৭হাজার মেট্রিক টন, তারপরই উত্তর ২৪ পরগণা ৫০০০ মেট্রিক টন, পূর্ব বর্ধমান ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা ২জনই ৪৫০০ মেট্রিক টন, হুগলী ৩৫০০ মেট্রিক টন এবং মূর্শিদাবাদ ও বীরভূম উভয়েই ৩০০০ মেট্রিক টন , এরপর নদীয়া ২৫০০ এবং পশ্চিমবর্ধমান ও পশ্চিমমেদিনীপুর যথাক্রমে ২০০০ মেট্রিক টন করে ; এরপরই রয়েছে জলপাইগুড়ি, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মালদা , কোচবিহার , দার্জিলিং , আলিপুরদুয়ার এবং দুই মেদিনীপুর প্রতি বছর যথাক্রমহ্রাসে প্রায় ১০০০ থেকে ৫০০ মেট্রিক টন করে ই-বর্জ্য তৈরী করে, তুলনায় কম বৈদ্যুতিন বর্জ্য উৎপাদন করে উত্তরবঙ্গের জেলা গুলি
গৃহস্থলীর পুরোনো টেপ থেকে টিভি , ফ্রিজ থেকে সামান্য ব্যাটারী , মোবাইল থেকে ল্যাপটপ সবকিছুতেই কিয়দংশ মানুষ এখন যে কোনো সমস্যা হলেই মেরামতির বদলে নতুন কেনায় বেশী আগ্রহী , ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহারের বৃদ্ধি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বৃদ্ধি, ই.এম.আই. এর সুবিধা, এবং দৈনন্দিন জীবনে বৈদ্যুতিন সামগ্রী গুরুত্ব বৃদ্ধি র সাথে প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের কারণে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের জীবনকাল কমে যাচ্ছে, যা ই-বর্জ্যের পরিমাণ বাড়াচ্ছে। দামী জিনিষ হলে তা কোম্পানী গুলি বিনিময় করছে নতুন কেনার সময় কিন্তু হেডফোন বা স্মার্টওয়াচ কিংবা কিপ্যাড ওয়ালা মোবাইল , চার্জার , কী-বোর্ড , মাউস এর মতন ইলেকট্রনিক সামগ্রী গুলির কোনো প্রকার বিনিময় প্রথা না থাকায় তা মানুষ ফেলে দিচ্ছে আবর্জনার স্তুপে কিংবা দিচ্ছে ভাঙাচোরা জিনিষ ব্যবসায়ীর কাছে , ভারতে উৎপাদিত ই-বর্জ্যের মাত্র ১০% সরকারিভাবে রিসাইকেল করা হয়, বাকি অধিকাংশটা যায় স্থানীয় স্তরের ভাঙ্গাচোরা বিক্রেতার কাছে, যারা অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিকভাবে এই বর্জ্য থেকে পৃথকীকরণের ফলে হচ্ছে দূষণ অথবা পরবর্তীতে আবর্জনার স্তুপে ফেলা এইসব ইলেকট্রনিক বর্জ্যে থাকা বেশ কিছু পদার্থ দূষণ ঘটাচ্ছে মাটির তথা পরিবেশের, স্থানীয় স্তরের রিসাইক্লাররা প্রায়ই বৈদ্যুতিন বর্জ্যে থাকা মূল্যবান ধাতু সংগ্রহের জন্য প্লাস্টিক, তার, এবং সার্কিট বোর্ড পুড়িয়ে ফেলে। এটি থেকে ডাইঅক্সিন, ফিউরান এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়, যা বায়ুকে দূষিত করে মানুষের জন্য মারাত্মক শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে ; মূল্যবান ধাতু নিষ্কাশনের জন্য কখনো কখনো ই-বর্জ্যের উপর শক্তিশালী অ্যাসিড প্রয়োগ করা হয়, যা থেকে ক্লোরিন সহ ক্ষতিকারক গ্যাস নির্গত হয়, যা স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। ই-বর্জ্যতে থাকা লেড, পারদ, ক্যাডমিয়াম ইত্যাদি রাসায়নিক উপাদানগুলি মাটিতে মিশে স্থানীয় জলাধারে প্রবেশ করে। এর ফলে ভূগর্ভস্থ পানি এবং নদী-নালা দূষিত হয়, যা পানীয় জল এবং সেচের জন্য ক্ষতিকর। ই-বর্জ্য নিষ্পন্নের সময় ব্যবহৃত অ্যাসিড এবং ক্ষারীয় পদার্থগুলি মাটির মধ্যে মিশে যায় এবং জলজ পরিবেশে প্রবেশ করে, যা জলজ প্রাণীর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর , ই-বর্জ্যের মধ্যে থাকা ভারী ধাতু (যেমন লেড, পারদ) মাটিতে জমা হয়, যা জমির উর্বরতা হ্রাস করে এবং খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে মানুষের শরীরে বিষাক্ত প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। ভারী ধাতুর দীর্ঘস্থায়ী সংস্পর্শে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া ই-বর্জ্য নিষ্পন্নের সময় রাসায়নিক পদার্থের সঙ্গে সংস্পর্শে এলে এই কাজে যুক্ত কর্মীদের গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। ই-বর্জ্যের প্লাস্টিক এবং অন্যান্য উপাদানগুলিও মাটিতে নষ্ট হয়ে যায় না, যা দীর্ঘমেয়াদে মাটি দূষিত করে। অপরদিকে বৈজ্ঞানিক মতে সরকারী ভাবে স্বীকৃত সংস্থাগুলি প্রথম ধাপে, পুরনো ইলেকট্রনিকস সঠিকভাবে সংগ্রহ করে, সংগ্রহ করা ই-বর্জ্যকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে থাকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য অংশ (যেমন ধাতু ও প্লাস্টিক), বিপজ্জনক উপাদান (যেমন ব্যাটারি), এবং অব্যবহৃত অংশ। এই পর্যায়ে বৈদ্যুতিন উপাদানগুলির বিশ্লেষণ করা হয়, যাতে বিপজ্জনক উপাদানগুলি আলাদা করা যায়। ই-বর্জ্যের মধ্যে যদি কোন বিপজ্জনক উপাদান থাকে যেমন, প্লাম্বাম, ক্যাডমিয়াম, ও পারদ ইত্যাদি, সেগুলি নিরাপদে প্রক্রিয়াকরণের করতে হয় নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। এগুলি পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করা অত্যন্ত প্রয়োজন। বর্জ্যের অবশিষ্ট অংশগুলিকে জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ডিগ্রেডেশন প্রক্রিয়ায় নিঃশেষ করা হয় , এই প্রক্রিয়ায় উপাদানগুলো আউটডোর বা ইনডোর কম্পোস্টিং পদ্ধতির মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়, কম্পোস্টিং প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে উপাদানগুলো জৈব পদার্থে রূপান্তরিত হয়। এটি মাটির জন্য উন্নত সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়, যা কৃষির উন্নয়নে সহায়ক।
২০১৬ সালে প্রবর্তিত ও ২০২২ সালে সংশধিত ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী, ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের উৎপন্ন বর্জ্যের জন্য দায়িত্ব নিতে হবে, তারা ই-বর্জ্যের সংগ্রহ এবং পুনর্ব্যবহারের জন্য বাধ্য আইন মতে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাস্তব হয়ত অন্য কথা বলে !
অন্যান্য প্রকার বর্জ্যের তুলনায় ই-বর্জ্য অনেকবেশী ভয়ংকর, তার কারণ অপচনশীল বর্জ্য যেমন কাঁচ, প্লাস্টিকের মতন বর্জ্যে তুলনামূলকভাবে এ ধরনের একাধিক বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ কম থাকে, তাই সেগুলি সরাসরি একই মাত্রায় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে না, এগুলি পুনর্ব্যবহারের প্রক্রিয়াকরণের জন্য বর্তমানে অনেক কেন্দ্র গড়েও উঠেছে বেসরকারী ও সরকারী স্তরে
বৈদ্যুতিন বর্জ্য সরাসরিভাবে জাতিয় অর্থনীতির সাথে সম্পর্কযুক্ত , ই-বর্জ্যে সোনা, রূপা, তামা, এবং প্যালাডিয়ামের মতো মূল্যবান ধাতু রয়েছে, যা পুনর্ব্যবহার করা হলে নতুন ইলেকট্রনিক্স তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। সঠিকভাবে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করলে এসব মূল্যবান উপাদান পুনরুদ্ধার করা সম্ভব, যা পরিবেশবান্ধব এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও লাভজনক। অবৈজ্ঞানিকভাবে প্রক্রিয়াকরণের ফলে অচিরেই হারিয়ে যেতে পারে অনেক মূল্যবান ধাতু , ই-বর্জ্য প্রাকৃতিক সম্পদ কমাতে এবং কার্বন ফুটপ্রিন্ট হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ই-বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা শুধুমাত্র বর্জ্য হ্রাস নয়, বরং পরিবেশ সংরক্ষণ, মূল্যবান সম্পদের পুনর্ব্যবহার, জাতিয় অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু এ নিয়ে জনমানষে রয়েছে সার্বিক সচেতনতার অভাব , প্রশাসনিক কিংবা বেসরকারী তরফে নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে এই ই-বর্জ্য গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনার কেন্দ্র , ফলে সচেতন মানুষ আবার সুনির্দিষ্ট ই-বর্জ্য গ্রহণ কেন্দ্রের অভাবে খানিক বাধ্য হয়েই তা অবৈজ্ঞানিকভাবে পরিবেশে ফেলে দূষণ ঘটাচ্ছে, বর্তমানে ইলেকট্রনিক গাড়ি সহ টোটো, বাইক ইত্যাদির চাহিদা বাড়ছে , ফলে ভবিষ্যতে ব্যাটারী একটি অন্যতম ই-বর্জ্যের রুপ নেবে , পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতি হতে পারে ব্যাটারীতে থাকা লিথিয়াম থেকে, বিভিন্ন প্রকার ইলেকট্রনিক দ্রব্যে নিত্যদিন নির্ভরশীলতা বাড়াচ্ছে মানুষ ফলত বাজারে আসছে অত্যাধিক ইলেকট্রনিক সামগ্রী, যা কালের অতলে রুপ নেবে ই-বর্জ্যের , বিভিন্ন জেলায় বেসরকারী উদ্যোগে বৈজ্ঞানিকভাবে সচল ই-বর্জ্য গ্রহণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে কিন্তু যদি সকল পৌরসভা ও পঞ্চায়েত গুলিতে অন্তত ১টি করেও এই ইলেকট্রনিক বর্জ্য গ্রহণ ও প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র গড়ে তোলা যায় তাহলে আগামী দিনের এই ই-বর্জ্য সমস্যার কিয়দংশ সমস্যার সমাধান সম্ভব , পূর্ব ভারতে 'হুলাডেক রিসাইক্লিং' নামে সরকারীভাবে স্বীকৃত একটি বৈদ্যুতিন বর্জ্য ব্যাবস্থাপক সংস্থা কাজ করছে গত ২০১৫ সাল থেকে , সম্প্রতি তারা অসম সরকারের সাথে সরাসরি মৌ স্বাক্ষর করেছে সেই রাজ্যের ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে , পূর্বাঞ্চলের বাকি অংশ তথা পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, ঝাড়খন্ড সহ বিভিন্ন রাজ্যে তারা স্থানীয় স্তরের প্রশাসনিক শাসন কেন্দ্র গুলি তথা পৌরসভা বা পঞ্চায়েত এবং এ নিয়ে কাজ করা লাভজনক ও অলাভজনক বেসরকারী সংস্থাগুলির সাথে যৌথভাবে মৌ স্বাক্ষর করে একাজে নেমেছে , সম্প্রতি দক্ষিণ বঙ্গে স্টার্ট আপ ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ১৫ দিনের অভিযানে ২.২ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য সংগ্রহ করেছে শুধুমাত্র ১টি জেলা থেকেই , এর থেকে বোঝা যায় নিত্যবছর যে পরিমাণ বৈদ্যুতিন বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে , সমপরিমাণ ই-বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যাবস্থাপনা হচ্ছেনা
সন্দীপন সরকার আরও বলেন, জনগণের মধ্যে ই-বর্জ্যের প্রভাব এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার উপায় সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কর্মশালা, সেমিনার এবং ক্যাম্প ও শিক্ষার্থীদের জন্য এ বিষয়ে বিশেষ প্রোগ্রাম পরিচালনা করে তাদের ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতন শিক্ষা দিতেই হবে। সরকারকে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আরো কঠোর আইন ও নীতি তৈরি করতে হবে , ই-বর্জ্যের উৎপাদন এবং নিষ্পত্তির সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ই-বর্জ্য সংগ্রহের নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে, গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন স্থানে ই-বর্জ্য জমা দেওয়ার জন্য নির্ধারিত পয়েন্ট তৈরি করা যেতে পারে। ই-বর্জ্য জমা করার আগে, ব্যবহার করা যেতে পারে এমন যন্ত্রপাতির মেরামত করা উচিত। এটি নতুন পণ্য কেনার প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দেয়। স্থানীয়স্তরে চলা পুনর্ব্যবহারের জন্য প্রক্রিয়াকরণের কেন্দ্রগুলিকে সঠিক পরিকাঠামো ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের বৈজ্ঞানিক ভাবে পরিচালনের ব্যবস্থা করতে হবে এর জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ই-বর্জ্যের উৎপাদন এবং নিষ্পত্তির সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা দরকার ; বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ই-বর্জ্য পরিচালনা করে পরিবেশ সুরক্ষা এবং মানবস্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা যায়। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ই-বর্জ্য থেকে সৃষ্ট ঝুঁকি কমানো এবং মূল্যবান উপাদান পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা সম্ভব, অন্যথায় এটি বিশ্ব উষ্ণায়ণ ও পরিবেশ দূষণের অন্যতম অধ্যায় হতে চলেছে , সর্বস্তরে এই ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ জরুরি ও বিশেষ গুরুত্ব সহকারে ভবিষ্যতের কথা ভেবে পদক্ষেপ অত্যন্ত প্রয়োজন।