Bagheshwari Devi
হাওড়ার বাগনানের বাঘেশ্বরী দেবীর পূজা আজও ঐতিহ্যে অমলিন
Bengal Times News, 16 November 2024
লুতুব আলি, বাগনান : ঐতিহ্যে অমলিন হাওড়ার বাগনানের বাঘেশ্বরী দেবীর পূজা ও উৎসব সাড়ম্বরে শুরু হল। ব্রিটিশ আমলে উনবিংশ শতাব্দীর শেষ লগ্নে রূপনারায়ণ ও দামোদর নদের চরে বাঘের উপদ্রবে এবং আক্রমণে শত শত সাধারন মানুষের প্রাণ যেত। এই এলাকার জমিদার গোপাল লাল শীল রূপনারায়ণ ও দামোদর নদীর চর থেকে বাঘেশ্বরী দেবীকে তুলে এনে কাছারিপাড়ায় মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
বাগেশ্বরী দেবীর আরাধনা পরম্পরা হিসেবে আজও এখানকার ধর্মপ্রাণ মানুষেরা আরাধনায় অবিচল আছেন। ১৫ নভেম্বর বাগনানের আদি কাছারি পাড়াতে বাঘেশ্বরী দেবীর পূজা উৎসব এর নান্দনিক সূচনা হলো। বাঘেশ্বরী দেবীর পূজা ও উৎসবের অন্যতম কর্মকর্তা চন্দ্রনাথ বসু জানান, আগামী ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত এই পূজা ও উৎসব চলবে। এই পূজা ও উৎসবকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় আলোচনা ছাড়াও কীর্তন, বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সারা বাংলা অংকন প্রতিযোগিতা হচ্ছে। গবেষণা থেকে জানা যায় - বাগেশ্বরী দেবীর নাম অনুসারে বাগনানের নামকরণ হয়। পূর্বে বাঘনান নাম ছিল। অপভ্রংশ হয়ে বাগনান নামে পরিবর্তন হয়। এই এলাকায় বাঘের আক্রমণে শত শত মানুষের প্রাণ যেত। কেবল বাঘের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে এখানকার মানুষেরা বাঘেশ্বরী দেবীর আরাধনা শুরু করেন। এই আরাধনার ফলে বাঘের আক্রমণ কম ছিল বলে অনেকের বিশ্বাস। ঊনবিংশ শতকে বাঘের আক্রমণ ছাড়াও সারা বছর ধরে মহামারী লেগে থাকতো । বাঘের আক্রমণ ও এই সমস্ত মহামারী থেকে রক্ষা পেতে দক্ষিণ রায়, বনবিবি ও বাগেশ্বরী দেবীর আরাধনায় এখানকার মানুষেরা নিজেদের অর্পণ করতেন। হাওড়া জেলার জনপ্রিয় জনপদ গুলির মধ্যে বাগনান হচ্ছে অন্যতম। এখানকার কল্পতরু বৃক্ষ অসংখ্য সাধারণ মানুষের মনষ্কামনা পূর্ণ হতো। জানা যায়, নান হচ্ছে আরবি শব্দ এর অর্থ হল চর ভূমি।
চন্দ্রনাথ বসু আরও জানান, প্রায় চারশত বছর আগে দামোদর নদীর তীরে জঙ্গলে গাছের তলায় এই দেবীর পূজা শুরু হয়। পরে জমিদার মতিলাল শীল কাছারি পাড়াতে মন্দির স্থাপন করেন। সেই মন্দির ভগ্ন অবস্থায় থাকার পর নতুন ভাবে কুড়ি বছর আগে সবার সাহায্যে তৈরি হয়। বাঘেশ্বরী দেবীর পূজা ও উৎসবকে কেন্দ্র করে সারাদিন ভক্তরা ভোগ প্রসাদ গ্রহণ করেন। এই পূজা উপলক্ষে পরিবেশ রক্ষায় চারা গাছ বিতরণ করা হয়। বাগেশ্বরী দেবীর পূজা উৎসবকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক উন্মাদনার সঞ্চার হয়।