Art Exhibition
গণেশ আর্ট গ্যালারিতে তিন দিনের রঙমেলায় ৭৫ জন চিত্রশিল্পীর ছবি প্রদর্শিত
Bengal Times News, 26 March 2024
লুতুব আলি, কলকাতা : কলকাতা শোভাবাজার মেট্রো, কুমোরটুলি সংলগ্ন অঞ্চলে গণেশ আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হল তিন দিনের রঙমেলা। আয়োজক বে রঙিন কলম। বে রঙিন কলমের তরুণ সদস্য সদস্যাদের রঙমেলা আক্ষরিক অর্থে কলকাতাকে রাঙিয়ে দিল। বেরঙিন কলমের চতুর্থ বর্ষ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সঞ্চার হয়। অনুষ্ঠানের স্লোগান ছিল হার না মানা হার। তিনদিনের এই অনুষ্ঠান প্রকৃত অর্থে একটি ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান ছিল। ইজরায়েলে বিভীষিকাময় যুদ্ধ গা শিউরে ওঠার মত ছিল। অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে যুদ্ধের বিরোধিতা করে শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবিতে বর্ষীয়ান চিত্রশিল্পী বরুন সাহা আকাশে সাদা পায়রা উড়িয়ে দেন। সমগ্র বিশ্বের প্রতি মুক্তিকামি মানুষের পাশে দাঁড়াতে, যুদ্ধ পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রতীকী স্বরূপ এই বার্তা ছিল শুভ সূচনা লগ্নে। অনুষ্ঠানের সূচনা লগ্নে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপরে সংগীত আমার হৃদ মাঝারে রাখবো, নয়নে মদিনা। পরক্ষণেই হরে কৃষ্ণ হরে রাম... সকলের মনকে স্পর্শ করে। বর্তমানে অধিকাংশ শিশুরাই বিপ্লবী যুগের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম জানেনা। এই অনুষ্ঠানের শহীদ বিপ্লবী ভগৎ সিং সহ অন্যান্যদের স্মরণ করে শহীদ দিবস পালন করা হয়। এঁদের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হয়। এই অনুষ্ঠানে শিশুরা এসে এই প্রথম এই বিপ্লবীদের কথা জানতে পারলো। বে রঙিন কলম শৈশব অবস্থা থেকেই শিশুদের স্বদেশ প্রেম, গুরুজনদের প্রতি ভক্তি এই ব্যাপারেও পাঠ দিয়ে থাকে। বিগত দিনে সাংস্কৃতিক আন্দোলনে বাংলায় নবজাগরণ ঘটেছিল। অবক্ষয়ী সমাজ ব্যবস্থায় তা নষ্ট হতে বসেছে বলে অভিমত পোষণ করেন বে রঙিন কলমের প্রতিষ্ঠাতা বর্তমানে সম্পাদক বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী আকাশ পাইন। এক সাক্ষাৎকারে আকাশ পাইন বলেন, বিকল্প সংস্কৃতির প্রসার, ভারতের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরায় বে রঙিন কলমের মুখ্য উদ্দেশ্য। নেতা মন্ত্রীদের লেখা জোর করে পড়ানো হচ্ছে। যাঁদের লেখাপড়ানো উচিত তাঁরা ব্রাত্য থেকেই যাচ্ছেন। বে রঙিন কলমের বর্তমানের ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় কুড়ি হাজার। সকলেরই বয়স ২৫ বছরের মধ্যে। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পক্ষে, সুস্থ সংস্কৃতির বাতাবরণ তৈরি করতে বদ্ধপরিকর এই বেরঙিন কলম পরিবার।
অনৈতিক, পচে যাওয়া দিকগুলি মেরামত করে মূল স্রোতে এগিয়ে নিয়ে যেতে অঙ্গীকার করেছে এই বে-রঙিন কলম পরিবার। আকাশ বাবু দাবি করেন প্রকৃত অর্থে পরিবর্তন একদিনে হবে না কিন্তু একদিন হবেই। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ছাত্রী বে-রঙিন কলমের সদস্যা পিউলি দাস বলেন, সাহিত্য, সংস্কৃতির রঙ্গনে বে রঙিন কলম পরিবার বর্তমানে খুবই প্রাসঙ্গিক। প্রতিদিনই সদস্য সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সকলের ঐক্যবদ্ধ মত বিনিময়ের ফলে বেরঙিন কলম সমাজের বুকে রঙিন হয়ে দেখা দিচ্ছে। তিন দিনের এই রং মেলায় রাজ্যের বিশিষ্ট ৭৫ জন চিত্রশিল্পীদের ছবি প্রদর্শিত হয়। উল্লেখ্য, ১২ বছরের মধ্যে ছেলেমেয়েদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। সবথেকে কনিষ্ঠ শিশু শিল্পী সৃষ্টি সেন সকলের নজর কাড়ে। এই রঙমেলাতে সদস্যদের হাতে তৈরি করা গয়না, হারবাল রং, হাতে তৈরি পোশাক প্রদর্শিত হয় এবং বেচাকেনাও হয়।
বস্তুতপক্ষে এই রঙমেলা হয়ে উঠেছিল সকলের কাছে প্রিয়। অনুষ্ঠানে সংগীত, কবিতা পাঠ, শ্রুতি নাটক, প্রাণ খোলা আলাপচারিতা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বে রঙিন কলম কোর কমিটির সদস্য সহ প্রশাসক এবং সদস্য ঐশিক দত্ত, বিশিষ্ট শিল্পী অভিলাষ পাল, আখোড় কথা প্রকাশনীর প্রকাশক শুভঙ্কর মাঝি, বিশিষ্ট শিল্পী দেবেশ চক্রবর্তী, বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী দীপান্বিতা বেনেগাল, চিত্রশিল্পী রাজর্ষি চক্রবর্তী, বিশিষ্ট সংগঠক চন্দনাথ বসু, তরুণ পাত্র, চিত্রশিল্পী বাপ্পাদিত্য মাঝি, বিশিষ্ট সাহিত্যিক রণিত ভৌমিক। রং মেলার দ্বিতীয় দিনে প্রখ্যাত সাহিত্যিক রণিত ভৌমিকের হাত ধরে প্রকাশ পায় বেরঙিন কলম প্রযোজিত এবং পদাতিক নিবেদিত রঙ্গন সাহিত্য পত্রিকা। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কবি অদ্বিতীয়, প্রখ্যাত শিল্পী মানষ রায়, নৃত্যশিল্পী লাবণ্য ঘোষ, সংগীতশিল্পী রাজদীপ মুখার্জী, প্রখ্যাত ভাস্কর্য শিল্পী অসীম পাল, উই আর দি কমন পিপল এর প্রতিষ্ঠাতা শুভজিৎ দাশগুপ্ত, কলকাতা জেলার ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব বর্ণনা মুখোপাধ্যায়। সমাপ্তি বক্তব্য রাখেন রংমালা কমিটির সম্পাদক মলয় খামরই, রংমেলা কমিটির সভাপতি আকাশ পাইন।