Fine arts
ললিতকলায় অসামান্য অবদানের স্বাক্ষর রাখছেন পূর্ব রেলের কর্মী শঙ্কর তরফদার
Bengal Times News, 3 February 2024
জগন্নাথ ভৌমিক, কলকাতা : ছোটবেলা থেকে ছিল ছবি আঁকার ঝোঁক। কোথাও অঙ্কন প্রতিযোগিতা বা প্রতিমা তৈরী দেখলেই দাঁড়িয়ে পড়তেন তিনি। সৃষ্টিধর্মী কাজের প্রতি তাঁর এই অদম্য আকর্ষণ আজও বিদ্যমান। শঙ্কর তরফদার, বর্তমানে লিলুয়া ওয়ার্কশপে অফিস সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে কর্মরত। শৈশব থেকেই মন দিয়ে ছবি এঁকে চলেছেন - তা স্লেট -পেন্সিলেই হোক বা পরবর্তীকালে ক্যানভাসে জল রং বা তেল রঙে তুলির টানেই হোক, তাঁর আঁকা সমস্ত প্রতিকৃতিই যেন জীবন্ত ও বাস্তবধর্মী। বিএসসি পাশ করার পরে ছবি আঁকার প্রতি এই অদম্য উৎসাহ তাঁকে নিয়ে গেলো আর্ট কলেজের দোরগোড়ায়। তারপর ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজ থেকে ভিজ্যুয়াল আর্টে প্রথম শ্রেণী সহ ৫ বছরের ডিপ্লোমা উত্তীর্ণ হওয়ার পরে চাকরির চেষ্টা।
চাকরিজীবনে শিক্ষক হিসাবে প্রথম পোস্টিং পেলেন আজিমগঞ্জের রেলওয়ে এটিপি স্কুলে ১৯৯৬ সালে। আজিমগঞ্জের রেল স্কুলে শিক্ষক হিসেবে চাকরি করার সময় তিনি আকর্ষিত হন মুর্শিদাবাদের ঐতিহাসিক ভবনগুলির প্রতি। ছুটির দিন গুলিতে এখানকার ঐতিহাসিক ভবনগুলিতে ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং পুরোনো স্থাপত্যে নির্মিত ভবনগুলির উপর প্রচুর ছবি এঁকেছেন। কলকাতার একাডেমি অফ ফাইন আর্টসে শঙ্করবাবুর এই নিয়ে প্রদর্শনী ভূয়সী প্রশংসা লাভ করে। এর সঙ্গে রয়েছে আরও অনেক বিক্ষিপ্ত অথচ জীবনধর্মী শিল্প নিদর্শন যেমন, আজিমগঞ্জের ডন বস্কো গির্জায় সাঁওতালদের হারিয়ে যাওয়া জীবন যাত্রা নিয়ে ছবি। সেখানে ৩টি ১০ ফুট x ৩ ফুট মাপের ছবি ওঁর শিল্পকলার এক জীবন্ত নিদর্শন।
এরপর ২০০২ সালে তিনি লিলুয়ায় পূর্ব রেলওয়ের হাই স্কুলে শিক্ষকতা করতে চলে আসেন। এই সময় তাঁর জলরঙে আঁকা ছবি বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপ্তিলাভ করে। তারমধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য তাঁর আঁকা বাউলদের ছবিগুলি। বাউলদের সহজিয়া জীবনদর্শনের প্রতি তাঁর আকর্ষণ তাঁর আঁকা বাউলদের ছবিগুলিকে যেন আরও জীবন্ত করে তোলে - এ কেবল শুধু চিত্রপট নয়, যেন কৃষ্ণপদে নিবেদিত বাউল অন্তরাত্মার ক্যানভাসে আত্মপ্রকাশ।
শিল্পীজীবনে এপর্যন্ত শঙ্করবাবু দেশি-বিদেশী বহু প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন এবং অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৯৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ যুব উৎসবে "বঙ্গ চ্যাম্পিয়ন" হিসেবে খ্যাতি, ২০০৫ সালে হাওড়া স্টেশনের ১০০ বছর পূর্তি ঊপলক্ষে প্রাপ্ত সম্মান, ২০১৩ সালে রোদ্দুর আর্ট ফাউন্ডেশন দ্বারা প্রাপ্ত "লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ", ২০১৯ সালে নয়া দিল্লির নব শ্রী আর্ট এন্ড কালচার এর অল ইন্ডিয়া পেইন্টিং কম্পিটিশন এন্ড এক্সিবিশন দ্বারা প্রাপ্ত সম্মান প্রভৃতি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য , ৪ঠা সেপ্টেম্বর , ২০২৩ থেকে ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসে আর্ট প্রদর্শনী এবং আর্ট ওয়ার্কস এর আমন্ত্রণ ছিল। এই আমন্ত্রণে অংশগ্রহণ করেন ভারত থেকে যাওয়া ৮ জন শিল্পী। এর পাশাপাশি ১৬ জন প্রবাসী বাঙালি চিত্রকর নিয়ে মোট ২৪ জন শিল্পীর আঁকা ছবির প্রদর্শনী হয় নেদারল্যান্ডসে, যেখানে শঙ্করবাবুর আঁকা ছবিগুলি ভূয়সী প্রশংসিত হয়।
পূর্বরেলে চাকরিক্ষেত্রে দক্ষতার সঙ্গে কাজ, তার সাথে ছবি আঁকা - এই নিয়ে শঙ্করবাবুর পথ চলা। যন্ত্রনির্ভর রেল সংস্কৃতির অঙ্গ হয়েও ললিতকলার প্রতি শঙ্কর তরফদারের এই আকর্ষণ রেলওয়ে আধিকারিকরা যথেষ্ট সহমর্মিতার সাথে দেখেন। পূর্ব রেলের অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার সুমিত সরকারক্রমাগত উৎসাহিত করে চলেছেন শঙ্করবাবুকে। তাঁর সৃষ্টিসুখের উল্লাস আরও ব্যাপ্ত করে সবাইকে অঙ্গীভূত করার। পূর্বরেলের অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার শ্রী সরকারের এই উৎসাহ শঙ্কর তরফদারের পথ চলার পাথেয় হিসেবে কাজ করছে।