World Class Neurologist
ভারতীয় নিউরোলজিস্ট পেলেন বিশ্বসেরার খেতাব, ঐতিহাসিক সাফল্য
Bengal Times News, 4 November 2023
🌑 ডাঃ অরিন্দম বিশ্বাস
শরীরের রোগপ্রতিরোধ করার ক্ষমতা - ইমিউনিটি, আর সেটিই যখন শরীরের মাংস পেশীর বিরুদ্ধে কাজ করে তা এক গভীর অসুখে রূপান্তরিত হয়। যার নাম, মায়োসাইটিস। এই রুগীদের হৃদযন্ত্র ও অটোনমিক সিস্টেম নিয়ে গবেষণা করে বিশ্বের মধ্যে সেরা নিউরোলজি গবেষক হিসাবে খেতাব পেলেন ডাঃ এম এম সামিম। ডাঃ সামিম ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অফ নিউরোলজি’ দ্বারা সম্মানিত বিশ্বের সেরা তিনটি বেস্ট ক্লিনিক্যাল পেপার অ্যাওয়ার্ড প্রাপকের মধ্যে ভারতের এক মাত্র প্রাপক। বাকি দুজন ব্রাজিল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। উল্লেখ্য ডাঃ এম এম সামিম বর্ধমান মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছেন।
নিউরোলজি সম্পর্কে আলোচনা এবং নতুন নতুন গবেষণা জানতে এবং জানাতে প্রতি দু’বছর অন্তর ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সের আয়োজন করে ‘ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ নিউরোলজি’। কনফারেন্সে হাজির হন নিউরোলজিস্ট এবং নিউরো সায়েনটিস্টরা। নার্ভের নতুন নতুন কী সমস্যা আসছে এই নিয়ে আলোচনায় প্রায় ৭ হাজার নিউরোলজিস্ট এবং নিউরো সায়েনটিস্ট অংশগ্রহণ করেন।
এ বছর কানাডার মনট্রিয়েল শহরে গত ১৫ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত এই কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে সমস্ত দেশের নিউরোলজি বিষয়ে রিসার্চ, ক্লিনিক্যাল পেপার জমা দেওয়া হয়। পরে সেগুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ‘বেস্ট ক্লিনিক্যাল পেপার অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়। তিনজনের মধ্যে ভারতের একজনকে সফল গবেষণার জন্য পুরস্কার প্রদান করা হয়। তাঁদের মধ্যে হলেন ব্যাঙ্গালোরের নিমহান্স হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডা. সামিম। এই পুরস্কার প্রদান সম্পর্কে একগুচ্ছ প্রশ্নের জবাব দিলেন ডা. সামিম।
আপনাকে কেন আন্তর্জাতিক এই পুরস্কার প্রদান করা হল?
বোঝানোর সুবিধার্তে, শুরু করি জানা উদাহরণ দিয়ে, দক্ষিণ ভারতের অভিনেত্রী সামন্ত প্রভূর এক পেশির রোগ হয়, যাকে মায়োসাইটিস বলা হয়। এই রোগ হলে দেহের ইমিউনিটি মাংসপেশিকে নষ্ট করে দেয়। মাংসপেশির মধ্যে ইমিউনোলজিক্যাল রোগ হওয়ার কারণেই দেহের মধ্যে এই সমস্যা তৈরি হয়। এই রোগীদের হৃৎযন্ত্র আর নার্ভ-পেশির সংযোগ নিয়ে গবেষণার জন্য এই অ্যাওয়ার্ড আমায় দেওয়া হয় ।
মাইয়োসাইটিস নিয়ে কীভাবে গবেষণা করলেন ?
ডা. সামিম তাঁর ডিএম ডক্টরাল থিসিস হিসেবে ব্যাঙ্গালোরের নিমহান্সের প্রখ্যাত পেশি বিশেষজ্ঞ ডা. এ নালিনী-এর টিম এবং ওই শহরের হার্টের হাসপাতাল শ্রী জয়দেবা কার্ডিয়াক হাসপাতালের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেন। মায়োসাইটিস রোগের হার্ট এবং অটোনোমিক সিস্টেমের কী কী সমস্যা হয়, (যা পূর্বে অনেকাংশে অজানা ছিল) এবং উহা কীভাবে তাড়াতাড়ি নির্ণয় করা যায়, তার উপর গবেষণা করেন। এই গবেষণার সারাংশ যা, কিভাবে এই রোগ আরো তাড়াতাড়ি নির্ণয় করে , যথাশীগ্রহ চিকিৎসা করা যাই তা নিয়ে। যা ভারত তথা বিশ্বের মানুষের জন্য কল্যাণক।
ভারত তথা বিশ্বে এই রোগের প্রভাব কেমন ?
সারা বিশ্বে এই রোগ ১ লক্ষের মধ্যে ১৪ থেকে ২২ জনের মধ্যে হয়। দক্ষিণ ভারতের প্রখ্যাত অভিনেত্রী সামন্থা রুথ প্রভূর এই রোগ রয়েছে।
এই পুরস্কারের পিছনে আরও কাদের অবদান রয়েছে ?
এই অ্যাওয়ার্ড নিমহান্সের ইতিহাসে প্রথম। নিমহান্সের বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং আমার গাইড ডা. নালিনী। নিমহানসের প্রফেসর মহাশয়েরা আমাদের টীম কে শুভেচ্ছা প্রদান করেন । আমার সম্পর্কে ডা. নালিনী বলেন, ‘এটা নিশ্চয়ই আমাদের ডিপার্টমেন্টের জন্য গর্বের।' এছাড়া ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর, নিউদিল্লি), সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ বোর্ড (এসইআরবি, নিউদিল্লি) পুরস্কার আনার জন্য আমাকে গ্রান্ট দেয়।
এর আগে আর কী কী পুরস্কার পেয়েছেন ?
পেশেন্ট দেখা ও রিসার্চ ছাড়াও, নিউরোলজি বিভাগের বিভিন্ন উপ-বিভাগে, যেমন, ডিমাইলিনেশন, নিউরো মাসকুলার, মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার এবং জেনারেল নিউরোলজি-এর বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় এবং আন্তরাষ্ট্রীয় কুইজে প্রথম স্থান অধিকার করেছি। সামগ্রিক ভাবে ছয় টি কুইজ এ প্রাইজ পাই,যার মধ্যে চারটিতে প্রথম স্থান; এরকম সাফল্য ইন্ডিয়ান নিউরোলজিস্টদের মধ্যে বিরল। অন্যতম কুইজ বিজয় হল--- এশিয়ান অ্যান্ড ওশিয়ান কংগ্রেস অফ নিউরোলজি- ২০২২ (এওসিএন)। ৬টি দেশকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ান হয়েছিলাম।
পড়াশোনা সম্পর্কে কিছু বলুন ?
২০১৬ সালে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে গোল্ড মেডেল নিয়ে প্রথম হয়ে এমবিবিএস পাস করা । এর পর অল ইন্ডিয়ায় প্রথম স্থান অধিকার করে নিমহান্সের প্রবেশিকায় উত্তীর্ণ হয়ে সরাসরি নিমহান্সে ডিএম ভর্তির সুযোগ পাই ।
বর্তমানে নিমহান্স ব্যাঙ্গালোরের ডিপার্টমেন্ট অব নিউরোলজিতে কর্মরত।
আপনার কী ‘হবি’ রয়েছে ?
পড়াশোনা ছাড়াও কিছু হবি আছে, সেটা হচ্ছে কবিতা লেখা। পেশেন্টের দুঃখ কষ্ট শুধু নিজের চেম্বারেই ফেলে আস্তে পারেননা উনি, বরং তাদের ব্যথা গুলো নিয়েই নিজের অবসর সময় তাদের কান্না গুলোকেই কবিতার ভাষা দিয়ে ফেলেন, ‘ক্যানভাস অফ অ্যাগোনি’ যা জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউরো সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে।