Rasbihari Basu
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্র বিপ্লবের বর্ণময় চরিত্র বিপ্লবী রাসবিহারী বসু
Bengal Times News, 25 May 2023
জগন্নাথ ভৌমিক, পূর্ব বর্ধমান : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্র বিপ্লবের উজ্জ্বল নক্ষত্র বিপ্লবী রাসবিহারী বসু। আজ এই মহান বিপ্লবীর জন্মদিন। ১৮৮৬ সালের ২৫ মে তিনি অবিভক্ত বর্ধমান জেলার রায়নার সুবলদহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অধুনা পূর্ব বর্ধমান জেলার রায়না ২ ব্লক। শৈশবে গ্রামের যে পাঠশালায় তিনি পড়েছিলেন এখন তার নাম হয়েছে সুবলদহ রাসবিহারী বসু প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে পূর্ণ মর্যাদায় সংরক্ষিত রয়েছে বিপ্লবীর চিতাভস্ম। রাসবিহারী বসুর পিতা বিনোদ বিহারী বসু কর্মসূত্রে হুগলি জেলার চন্দননগরে থাকতেন। সেখানকার মর্টন স্কুল ও ডুপ্লে কলেজের ছাত্র ছিলেন রাসবিহারী বসু। কলেজের পাঠ সম্পূর্ণ করে রাসবিহারী বসু স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির অন্যতম সংগঠক রাসবিহারী বসু ১৯০৮ সালে আলিপুর বোমা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হন। কারাগার থেকে মুক্তিলাভের পর তিনি দেরাদুনে যান এবং সেখানে বন গবেষণা ইনস্টিটিউটে হেডক্লার্ক হিসেবে কাজ করেন। দেরাদুনে থাকাকালীন তিনি গোপনে বাংলা, উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলেন। পরে বাঘাযতীনের একনিষ্ঠ অনুগামী হয়ে ওঠেন রাসবিহারী বসু। দিল্লিতে লর্ড হার্ডিঞ্জের কনভয়ে তিনি বোমা ফেলেন। ইংরেজ পুলিশের গ্রেপ্তারি এড়াতে পালিয়ে বেড়ান। চলে আসেন কাশী সেখান থেকে চলে আসেন কলকাতায়। তারপর চন্দননগর, নবদ্বীপ প্রভৃতি স্থানে খুব সর্তকতার সাথে ঘুরে ঘুরে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিতে তিনি কখনো নারী বেশে, কখনো দারোয়ান, কাজের লোক, সন্ন্যাসী বেশে চলাফেরা করতেন। তিনি এমনভাবে চলতেন যাতে কেউ কোন ধরনের সন্দেহ না করতে পারে। এরপর সশস্ত্র বিপ্লবকে সফল করার উদ্দেশ্যে বেছে নেন জাপান দেশটিকে। ১৯১৫ সালের ১২ মে কলকাতার খিদিরপুর থেকে তিনি জাপানের জাহাজ ‘সানুকি-মারু' চড়ে জাপানে পৌঁছে যান। জাপানে থেকেও ভারতের স্বাধীনতার জন্য তিনি নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান। জাপান সরকার রাসবিহারী বসুকে “সেকেন্ড অর্ডার অব মেরিট অব দি রাইজিং সান” খেতাবে ভূষিত করে। রাসবিহারী বসু ভারতের বাইরে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন ও পরবর্তীকালে নেতাজির হাতে ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’-এর পরিচালনভার তুলে দেন৷ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজ ব্রিটিশ শাসনের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল।
রাসবিহারী বসুর তৎপরতায় জাপান ভারতের জাতীয়তাবাদীদের পাশে দাঁড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় সমর্থন জোগায়। ১৯৪২ সালের ২৮-২৯ মার্চ টোকিওতে তাঁর ডাকে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলন থেকে একটি সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তাব দেন। এই সম্মেলনে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লিগ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। দেশ ছেড়ে বিদেশে থাকাকালীন তিনি ব্রিটিশ পুলিসের চোখে ধূলো দিতে বার বার বাসস্থান বদলেছেন। নানা স্থানে বিভিন্ন সময়ে তাঁকে ছদ্মবেশ ধারণ করতে হয়েছে। জাপানে অবস্থানকালে ১৯১৮ সালের ৯ জুলাই রাসবিহারী বসু জাপানি সোমা পরিবারের কন্যা তোশিকো সোমাকে গোপনে বিবাহ করেন৷ তাদের দুই সন্তানের নাম হল তেৎসুকো হিগুচি বসু ও মাশাহিদে বসু।
ইতিহাসের পাতায় এক বর্ণময় চরিত্র হলো রাসবিহারী বসু। ১৯৪৫ সালের ২১ জানুয়ারি জাপানের টোকিওতে রাসবিহারী বসু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ এই মহান বিপ্লবীর জন্মদিনে বেঙ্গল টাইমস নিউজ এর পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা।
তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট