Father of Bengali newspaper
বাংলা সংবাদপত্রের জনক গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য-কে স্মরণ করলো পূর্ব বর্ধমানের বহড়া গ্রাম
Bengal Times News, 15 May 2023
জগন্নাথ ভৌমিক, পূর্ব বর্ধমান : বাংলা সংবাদপত্রের ইতিহাসে ১৫ মে দিনটি একটি মাইলস্টোন বলা যেতে পারে। ১৮১৮ সালের ১৫ মে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য বর্ধমান জেলার (অধুনা পূর্ব বর্ধমান) পূর্বস্থলি ব্লকের বহড়া গ্রামে মুদ্রণ যন্ত্র স্থাপন করে দেশীয় ভাষায় সাপ্তাহিক সংবাদপত্র হিসেবে বঙ্গাল গেজেটি প্রকাশ শুরু করে ছিলেন। ফলে পত্রপত্রিকা এবং সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত সকলের কাছেই এই দিনটি বিশেষ মর্যাদা বহন করে। অনেকেই ভুলবশত এই দিনটিকেই গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের জন্মদিন হিসেবে উল্লেখ করেন। কিন্তু সেটা ঠিক নয়, কারণ ১৮১৮ সালের ১৫ মে'র আগেই তিনি জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। উল্লেখ্য পূর্বস্হলী ২ ব্লকের পিলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বহড়া গ্রাম পরবর্তী সময়ে ছাপাখানাডাঙ্গা হিসেবে পরিচিত পায়। বিগত ৪৮ বছর ধরে সাংবাদিকরা ১৫ মে দিনটি বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে পালন করে আসছেন। এবছরও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। এবছর কালনা মহকুমা প্রেস ক্লাব ও গঙ্গাকিশোর স্মৃতি রক্ষা কমিটির যৌথ উদ্যোগে বঙ্গাল গেজেটি'র প্রতিষ্ঠাতা তথা বাংলা সংবাদপত্রের জনক গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য -কে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।
এবছর ১৫ মে'র অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল বিধায়ক কোটার ৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ের সংগ্রহশালার শিলান্যাস। পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চ্যাটার্জী শিলান্যাস করেন। উপস্থিত ছিলেন বিডিও সৌমিক বাগচী, গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সুমন দাস, কালনা মহকুমা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলেক শেখ, গঙ্গাকিশোর স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি দ্বারকানাথ দাস, সম্পাদক হীরা সেখ সহ লেখক ও সাংবাদিক তারকেশ্বর চট্টরাজ, জাতীয় শিক্ষক সুব্রত দাস, সাংবাদিক পুলক মন্ডল, দীপঙ্কর চক্রবর্তী, নিরঞ্জন মন্ডল, অলোক দত্ত, নির্মলেন্দু পাল, অশোক দত্ত, অভিজিৎ ব্যানার্জী, চন্দন দত্ত সহ অন্যান্যরা। উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা গঙ্গাকিশোরের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। কাটোয়া ও কালনা মহকুমার সাংবাদিকরা স্থানীয় মানুষজন উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য গত কয়েক বছর আগে কালনা মহকুমা শাসকের উদ্যোগে গঙ্গাকিশোরের বসতবাড়ির জমির জড়িপ করা হয়। পূর্বস্হলী ২ নং ব্লকের বিডিও সৌমিক বাগচীর উদ্যোগে স্থানটি ঘেরা ও ঢালাই রাস্তাও নির্মাণ করা হয়। তৈরি হয় গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য স্মৃতিস্তম্ভ। এবছর সেই ছাপাখানাডাঙার অনুষ্ঠানে নবনির্মিত গঙ্গাকিশোর স্মৃতিস্তম্ভে মাল্যদান, গঙ্গাকিশোর সংগ্রহশালার শিলান্যাস ও স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করা হয়। এবারের অনুষ্ঠানে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য-কে নিয়ে সাংবাদিক পুলক মন্ডল এর লেখা 'উপেক্ষিত নায়ক' বইটির প্রচ্ছদ প্রকাশিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য হাওড়া- কাটোয়া রেল পথের অগ্রদ্বীপ ষ্টেশনের কাছে বহড়া গ্রামে মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন করেছিলেন। তাঁর পেশা ছিল শিক্ষকতা আর নেশা ছিল সাংবাদিকতা। গঙ্গাকিশোর শ্রীরামপুর মিশনারি থেকে ছাপার কাজ শিখে নিজ গ্রামে ছাপাখানা স্থাপনে ব্রতী হন। বহড়ায় গ্রামের ছাপাখানায় ছাপা ও বই লেখার কাজ পুরোদমে চালিয়ে যান।
গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের জন্ম সাল সঠিক ভাবে কোথাও উল্লেখ নেই। সম্ভবত ১৭৮২ সালে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। জানা যায়, তিনি প্রয়াত হন ১৮৩১ সালে। এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ মে অবিভক্ত বর্ধমান জেলার ভূমিপুত্র ও রাজ্যের মন্ত্রী প্রখ্যাত সাংবাদিক দাশরথি তা, দক্ষিণারঞ্জন বসু এবং স্হানীয় মানুষ, কবি, লেখক, সাংবাদিকরা বহড়া গ্রামে গঙ্গাকিশোরের স্মরণানুষ্ঠান শুরু করেন। পরম্পরায় সেই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে।