Mini Marathon for women
আলোর উৎসবের সন্ধিক্ষণে আরশিনগর এর উদ্যোগে বর্ধমানে প্রথম মহিলাদের সফল মিনি ম্যারাথন
Bengal Times News, 19 October 2025
জগন্নাথ ভৌমিক, বর্ধমান : আলোর উৎসবের সন্ধিক্ষণে শহর বর্ধমানে আয়োজিত হলো 'রান ফর লাইট’ শীর্ষক দৌড় প্রতিযোগিতা। 'আজকের আরশিনগর' এর উদ্যোগে রবিবার সকালে মহিলাদের জন্য আয়োজিত বর্ধমানে প্রথম মিনি ম্যারাথনে মেয়েদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। উল্লাস মোড় থেকে বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুল পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া, কলকাতা, উত্তর চব্বিশ পরগনা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা থেকে প্রায় ১০০ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে।
বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুলের মাঠে আয়োজিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব বর্ধমানের জেলা শাসক আয়েশা রাণী এ, জেলা পুলিশ সুপার সায়ক দাস, জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি গার্গী নাহা, বর্ধমান ডিস্ট্রিক্ট রাইস মিলস অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি আব্দুল মালেক, জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি দেবু টুডু, মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরুণাভ চক্রবর্তী, বর্ধমান অ্যাপোলো হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ঐশী ঘোষ দস্তিদার এবং আজকের আরশিনগর এর সভাপতি পার্থ চৌধুরী।
প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার শম্পা গাইন। তাঁর হাতে মেডেল, শংসাপত্র ও ২০,০০০ টাকা পুরস্কার তুলে দেন পূর্ব বর্ধমানের জেলা শাসক আয়েশা রানী এ। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন জয়শ্রী দাস। তাঁর হাতে মেডেল, শংসাপত্র ও ১০,০০০ টাকার পুরস্কার তুলে দেন পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার সায়ক দাস। তৃতীয় স্থানাধিকারী পুষ্পা রানী মাহাতোকে মেডেল, শংসাপত্র ও ৫০০০ টাকার পুরস্কার তুলে দিয়ে সম্মানিত করেন জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি গার্গী নাহা।
এছাড়াও ৭ জনকে মেডেল, শংসাপত্র ও নগদ ২০০০ টাকা করে দিয়ে সম্মানিত করা হয়। ৫ জনকে মেডেল , শংসাপত্র ও নগদ ১০০০ টাকার পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারির হাতে সুদৃশ্য ট্রফিও তুলে দেওয়া হয়। এছাড়া ২৫ জনকে পদক ও শংসাপত্র এবং বাকি সকলের হাতেই শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা শাসক আয়েশা রানী এ এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, "প্রতিবছর এমন আয়োজন হলে মহিলারা মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী ও আত্মনির্ভর হবে।”
উল্লেখ্য “রান ফর লাইট” শীর্ষক ১৪ বছরের ঊর্ধ্বে মহিলাদের জন্য বিশেষ ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজনকে বিশেষ ভাবে সাধুবাদ জানান বর্ধমান ডিস্ট্রিক্ট রাইস মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল মালেক। এই ধরনের উদ্যোগে সব সময় পাশে থাকারও আশ্বাস দেন।
এদিনের মিনি ম্যারাথন সুষ্ঠু ভাবে আয়োজনে সহযোগিতায় ছিলেন জেলা পুলিশ, জেলার স্পোর্টস অফিসিয়ালরা, পূর্ব বর্ধমান সাইকেলিং ক্লাব, দুর্গাপূজা সমন্বয় সমিতি ও মায়ের ভান্ডার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যারা। বর্ধমানের উল্লাস মোড় থেকে সবুজ পতাকা নাড়িয়ে দৌড়ের সূচনা করা হয়। সামনে ছিলেন ট্রাফিক গার্ডের পুলিশ টিম, অ্যাম্বুলেন্স এবং চিকিৎসক । জি টি রোডের মোড়ে মোড়ে ছিল স্কাউট, ব্যবসায়ী, বেসরকারি হাসপাতাল সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও ক্রীড়াপ্রেমীদের ক্যাম্প।
আজকের আরশিনগর সংস্থার সভাপতি পার্থ চৌধুরী জানান, “ আজকের দিনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেয়েদের অগ্রগতিকে উদযাপন করার উদ্দেশ্যেই এই দৌড়ের আয়োজন।” অনুষ্ঠানটি পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সহ-সভাপতি অপূর্ব দাস এবং সংগঠনের সম্পাদক অরূপ লাহা। সভাপতি পার্থ চৌধুরী ইতিহাস স্মরণ করে বলেন, “একসময় এই এলাকায় নারী-পুরুষ উভয়েই নীলকর জমিদারদের ও ইংরেজদের অত্যাচারে ভুগতেন। কৌলিন্য প্রথার কারণে কিশোরী মহিলাদেরকে জ্বলন্ত চিতায় পোড়ানো হতো। বিভিন্ন রাজ্যে সদ্যোজাত কন্যাদের ধাত্রীদের দিয়ে হত্যা করা হতো। এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। আজকের দিনে মহিলারা সমাজে নিজেদের জায়গা তৈরি করেছেন, দেশ চালাচ্ছেন। সেটাই সমাজে আলো আনছে। এই আলোর অভিযান জয়যুক্ত হোক।”
সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে সঞ্চালন করে সৌমি দত্ত রায়।




