বন্তির দত্তবাড়ির ৩০৮ বছরের দুর্গাপুজো এবছর নারীশক্তির হাতে
Bengal Times News, 27 September 2025
সুজিত দত্ত, পূর্ব বর্ধমান : বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোগুলির মধ্যে অন্যতম পূর্ব বর্ধমান জেলার রায়না ব্লকের বন্তির গ্রামের দত্তবাড়ি। সাবেকিয়ানা, ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের জন্য প্রসিদ্ধ এই পুজো এবছর ৩০৮ বছরে। বিশেষ দিক হলো, এ বছর প্রথমবার দত্তবাড়ির দুর্গাপুজোর সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছেন পরিবারের মেয়েরা। ‘নারীশক্তি’ নামে গঠিত এই বিশেষ পুজো কমিটির মাধ্যমে দত্ত পরিবারের গৃহবধূ ও কন্যারাই সমস্ত আয়োজন সামলাচ্ছেন।
দত্ত পরিবারের প্রবীণ সদস্য সুভাষ দত্ত, প্রিয়ব্রত দত্ত, কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত, রজত দত্ত প্রমুখ জানিয়েছেন, দক্ষিণ দামোদর অঞ্চলের এক সময়ের প্রভাবশালী জমিদার ব্যোমকালী দত্ত এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। অনেকে মনে করেন, বর্ধমান রাজবাড়ির তিলকচাঁদের দুর্গাপুজোর সময়কালের সমসাময়িক হলেও বন্তির দত্তবাড়ির পুজো আরও কয়েক দশক আগে শুরু হয়েছিল। প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে একটানা ধুমধাম করে দুর্গা মায়ের আরাধনা চলছে।
প্রতিমার সাজসজ্জায় রয়েছে এক বিশেষ বৈচিত্র্য। এখানে দেবী দুর্গা অধিষ্ঠিত হন একচালার কাঠামোয় তাঁর দুই কন্যা লক্ষ্মী ও সরস্বতীকে নিয়ে। দুই পুত্র কার্তিক ও গণেশ আলাদাভাবে দুই পাশে থাকেন। প্রতিমার অস্ত্রশস্ত্র এখনও পিতলের তৈরি, যা দত্তবাড়ির পুজোর এক বিশেষ ঐতিহ্য বহন করে আসছে।
এবারের ‘নারীশক্তি’ পুজোকমিটির কার্যকরী সদস্য শান্তি দত্ত, বৈশাখী দত্ত, মল্লিকা দত্ত, রিমঝিম দত্ত, সুমিতা দত্ত, ডোনা দত্ত প্রমুখ জানিয়েছেন— পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সহযোগিতায় তাঁরাই এবছর পূজার যাবতীয় দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। প্রতিমা গড়া থেকে শুরু করে পূজার্চনা, অতিথি আপ্যায়ন, চারদিনের নানা অনুষ্ঠান— সব কিছুতেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরাই।
প্রতি বছরই দত্তবাড়ির পুজো শুধু পারিবারিক নয়, হয়ে ওঠে গোটা গ্রাম ও আশেপাশের এলাকার মিলনক্ষেত্র। এবছরও পুজোর চারদিন নানা অনুষ্ঠান থাকছে— কৃতি ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ধুনুচি নাচ, শিশু ও মহিলাদের জন্য মজার প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। কর্মসূত্রে দত্ত পরিবারের বহু সদস্য দেশ-বিদেশে থাকলেও পুজোর সময়ে তাঁরা প্রত্যেকে গ্রামে ফিরে আসেন। ফলে দুর্গাপুজোই হয়ে ওঠে পরিবারের মিলনমেলা।
শুধু দুর্গাপুজো নয়, দত্তবাড়িতে দীর্ঘকাল ধরে দোল, চড়ক, গাজন, সরস্বতী পুজো, রথযাত্রা সহ একাধিক উৎসব বংশানুক্রমে পালিত হয়ে আসছে। তবে দুর্গাপুজোই এই পরিবারের গৌরবের মূল পরিচয়। এবছর সেই ঐতিহ্যে যুক্ত হলো নতুন অধ্যায়— নারীদের নেতৃত্বে বনেদি পুজোর আয়োজন।