শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু কে জামাই রূপে সাজিয়ে জামাইষষ্ঠী পালন ভক্তদের
Bengal Times News, 1 June 2025
বেঙ্গল টাইমস নিউজ, নবদ্বীপ : বিগত বছরগুলির ন্যায় এবারও নদীয়ার নবদ্বীপে বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী সেবিত শ্রীশ্রী ধামেশ্বর গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মন্দিরে শ্রীমন মহাপ্রভুকে জামাই রূপে সাজিয়ে জামাইষষ্ঠী পালন করল ভক্তরা। রবিবার গোটা রাজ্যের সঙ্গে একযোগে চৈতন্য ভূমি নবদ্বীপের বিভিন্ন বাড়িতে শঙ্খধ্বনি উলুধ্বনির মধ্যে দিয়ে জামাইকে বরণ ও আদর আপ্যায়নের মধ্যে দিয়ে জামাইষষ্ঠী পালন করা হয়। জামাইয়ের পছন্দসই বিভিন্ন রকম খাবার দেওয়া হয়েছে তার সামনে। শ্বাশুড়িরা নিজ নিজ জামাইকে বরণ করে আদর আপ্যায়ন করে জামাইষষ্ঠী পালন করে। সাধারণ মানুষের এমন উপাচারের সঙ্গে বিন্দুমাত্র ফারাক ছিল না ধামেশ্বর মন্দিরে শ্রীশ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর জামাইষষ্ঠীর অনুষ্ঠানের। সনাতন মিশ্রের এক কন্যা বিষ্ণুপ্রিয়া এবং মাধবাচার্য ও যাদবাচার্য নামে তিন সন্তান ছিল। যাদবাচার্যকে ছোট সন্তান হিসাবে দত্তক নিয়েছিলেন। সেই যাদবাচার্যের বর্তমান বংশধরদের ১৩ তম পুরুষ রূপ গোস্বামীর পরিবারের লোকজন এবারও গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে জামাই বরণ করে তার জামাইষষ্ঠী পালন করেছেন।
সকালে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর ঘুম ভাঙার পর জল-মিষ্টি সহযোগে প্রাত:রাশ, এরপর চিড়ে, দই মিষ্টি দিয়ে টিফিন, দুপুরে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর পছন্দসই খাবার মোচার ঘন্ট, কচুর শাক, পাঁচ রকমের ভাজা, টক ডাল, ছানার ডালনা, পুষ্পান্ন, চারটি দই-মিষ্টি সহযোগে দেওয়া হয়েছে ভোগ। কিছুক্ষণ বিশ্রাম করার পর গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে আরও কিছু মিষ্টি জল দিয়ে বিকেলের টিফিন করানো হয়েছে। এরপর রাতে লুচি, সুজি,পায়েস, মিষ্টি,ক্ষীর সহযোগে দেওয়া হয়েছে ভোগ। দুপুরেই পরানো হয়েছিল জামাইরূপে নতুন পোশাক। বাড়ির মহিলারা তালপাতার পাখা দিয়ে দিয়েছেন শাট অর্থাৎ হাওয়া। ভক্তদের মধ্যে অনেক মহিলা ও একইরকমভাবে জল মিষ্টি নিয়ে এসে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে জামাইকে বরণ করে নিয়ে তালপাতার পাখা দিয়ে হাওয়া দিয়েছেন। সারাদিন ধরেই মন্দিরে ছিল জামাই ষষ্ঠী উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান। এবারে একাধিক বৈষ্ণব ভক্তরা হাজির হয়েছিলেন গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর জামাইষষ্ঠীর অনুষ্ঠানের সাক্ষী হতে। মহাপ্রভুর দীক্ষা গ্রহণের পর সন্ন্যাস নেওয়ার আগে তার স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলেন সন্ন্যাসের অনুমতি দেওয়ার জন্য। অনুমতি নিয়ে নিজের পাদুকা রেখে গৃহত্যাগী হয়েছিলেন গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু। সেই পাদুকা বাপের বাড়িতে নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করে সেবা করা শুরু করেন বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী।
বিষ্ণুপ্রিয়ার ভাইয়ের পরিবারের ১৩ তম পুরুষ রূপ গোস্বামী জানান', বছরের ৩৬৪ দিন শ্রীমন মহাপ্রভু ভক্তদের দেবতা। মাত্র একটি দিন তিনি জামাই। বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর পরিবারের সদস্য হওয়ায় আমরা গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে এদিন জামাই রূপে বরণ করে আদর আপ্যায়ন করে থাকি। গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু এদিন আমাদের পরিবারের জামাই। তালপাতার পাখা দিয়ে বাড়ির মহিলারা তাকে হাওয়া দিয়ে শীতল বাতাস দেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাঁচ রকম ভোগ দেওয়া হয় মহাপ্রভুকে। জামাই হিসাবে মহাপ্রভু কে আদর আপ্যায়নের কোন ত্রুটি না রাখার আমরা চেষ্টা করি।