Jagaddhatri Puja in Chandannagar
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো নিয়ে এই প্রথম তথ্য ও চিত্রবহুল গ্রন্থ প্রকাশ, চলছে প্রদর্শনী
Bengal Times News, 7 April 2025
অমিত মিত্র ও পার্থ সরকার : এই প্রথম চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো নিয়ে একটি তথ্য ও চিত্রবহুল গ্রন্থ প্রকাশিত হলো, 'চন্দননগরের জগদ্ধাত্রীকথা'। আসলে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর আলোক সজ্জা, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যই ঐতিহ্যের আলোকে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। জগদ্ধাত্রী পুজো এই শহরের গর্ব। বর্তমানে সংস্কৃতির প্রধানতম প্রতীক হয়ে উঠেছে এখানকার জগদ্ধাত্রী পুজো।
সেই প্রেক্ষাপটে 'চন্দননগরের জগদ্ধাত্রীকথা' নামে একটি তথ্য ও চিত্রবহুল গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, সঙ্গে একটি প্রাসঙ্গিক প্রদর্শনী। গ্রন্থটি প্রকাশ করলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন।
৪ এপ্রিল এই গ্রন্থ এবং প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চন্দননগর কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস সরকার, প্রকাশক মায়া বুকসের কর্ণধার মধুছন্দা সেন, চন্দননগরের মহানাগরিক রাম চক্রবর্তী, চন্দননগর জগদ্ধাত্রী পুজো সেন্ট্রাল কমিটির সেক্রেটারি শুভজিৎ সাউ, চন্দননগর পৌরসভার ডেপুটি মেয়র মুন্না আগরওয়াল, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অভিজিৎ সেন এবং চন্দননগরের বিশিষ্ট সাহিত্য প্রেমী, শিল্পপ্রেমী এবং পূজা প্রেমী মানুষজন।
এক সময়ের ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর নামের সাথেই জড়িয়ে গেছে জগদ্ধাত্রী পুজো। শোনা যায় প্রায় আড়াইশ বছরের কিছু আগে চন্দননগরের চাউলপট্টিতে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন করেন জাতিস্মর তর্কালঙ্কার শুভেন্দু মাঝি। এরপর চাউলপট্টির উদ্যোক্তাদের সাথে কিছু মতান্তর হওয়ায় ১৭৬৮ সাল নাগাদ কাপড় ব্যবসায়ী শ্রীধর বা শশধর বন্দোপাধ্যায় চাঁদা তুলে বারোয়ারী পুজোর প্রচলন করেন।
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর এমন নানা ইতিহাসকেই বই-এর মলাটে বন্দী করলেন প্রাক্তন অধ্যাপক, সাহিত্যিক, সুবক্তা ড: বিশ্বনাথ বন্দোপাধ্যায় এবং প্রখ্যাত সত্যজিৎ গবেষক, প্রাবন্ধিক দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়। আর এর সাথে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে প্রখ্যাত অস্থি চিকিৎসক ডা: ভাস্কর দাসের তোলা প্রাণবন্ত ছবি।
'মায়া বুকস' থেকে প্রকাশিত এই বইকে ঘিরেই ৪ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত গ্যালারি দ্যা মঁসিয়ে সুর-এ চলছে এক প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনী ঘিরে চন্দননগরকে নিয়ে এক নষ্টালজিয়া উসকে দিয়েছেন উদ্যোক্তা অমিত মিত্র, ভাস্কর প্রদীপ সুর আর পরিকল্পক চিত্রশিল্পী ও চিত্রগ্রাহক শৈলেন নন্দী। গ্যালারির দেওয়ালে উঠে এসেছে ডা: ভাস্কর দাসের লেন্সে জগদ্ধাত্রী পুজোর বোধন থেকে বিসর্জনের নানা মুহূর্ত।
প্রদর্শনীতে রয়েছে পুজোকে ঘিরে বহু পুরনো বিলের পাতা, নানা বারোয়ারির স্যুভেনির, পুরনো আয় ব্যায়ের হিসেব, নানা কাগজ কাটিং সহ পুজো সংক্রান্ত ঐতিহাসিক অনেক দলিল, যা হাত দিয়ে ছুঁতে পারবেন দর্শক। রয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রখ্যাত ডোকরা শিল্পী হরেন্দ্র রানার তৈরি এক জগদ্ধাত্রী মূর্তি, শিশির ঘোষের নির্মিত জগদ্ধাত্রী পুজোর একটি প্রতীকী কাঠামো।
ওই অনুষ্ঠানে চন্দননগর তথা ভদ্রেশ্বর এবং চুঁচুড়ার ৬ জন বিশিষ্ট মৃৎশিল্পীকে 'মৃৎশিল্পী সম্মাননা ২০২৫' প্রদান করা হয়। সব মিলিয়ে চৈত্রের শেষ লগ্নে সকল পুজোপ্রেমী মানুষদের জন্য জগদ্ধাত্রী পুজোর গন্ধ এনে দিয়েছে এই প্রদর্শনী।