Bengal's vote protection campaign
বাংলার ভোট রক্ষা অভিযান নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংবাদিক সম্মেলন
Bengal Times News, 17 April 2025
জগন্নাথ ভৌমিক , বর্ধমান : বাংলার ভোট রক্ষা অভিযান নিয়ে পূর্ব বর্ধমানে তৃণমূল কংগ্রেস সাংবাদিক সম্মেলন করলো। বৃহস্পতিবার জি টি রোড কালিবাজার মোড়ে তৃণমূলের জেলা কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি তথা বর্ষীয়ান বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন জেলার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, সিদ্দিকুল্লাও চৌধুরী, বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য, শম্পা ধাড়া, অলক কুমার মাঝি, নিশীথ মালিক, তপন চট্টোপাধ্যায়, অপূর্ব চৌধুরী, সেখ শাহনেওয়াজ, নবীন বাগ, নেপাল ঘড়ুই, জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি গার্গী নাহা, জেলা পরিষদের মেন্টর মহঃ ইসলাম সহ তৃণমূল কংগ্রেস নেতা দেবু টুডু, উজ্জ্বল প্রামাণিক, বাগবুল ইসলাম, তন্ময় সিংহ রায়, আজিজুল হক মন্ডল, টিএমসিপি'র জেলা সভাপতি স্বরাজ ঘোষ, আইএনটিটিইউসি'র জেলা সভাপতি সন্দীপ বসু সহ অন্যান্যরা।
https://www.facebook.com/share/v/16FBTrUEQm/
বাংলার ভোট রক্ষা অভিযান প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরদর্শী নেতৃত্বে, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস বাংলার ভোট রক্ষা অভিযান শুরু করেছে – রাজ্যজুড়ে বুধভিত্তিক একটি বিস্তারিত যাচাই প্রক্রিয়া, যার লক্ষ্য হল বাংলার ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
এই অভিযানটি বাংলার ভোটার তালিকায় ভুয়া ও বহিরাগত ভোটারদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর উদ্দেশ্যে শুরু হয়েছে, যা নিয়ে ২৭শে ফেব্রুয়ারি, কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সভা থেকে প্রথম উদ্বেগ প্রকাশ করেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী।
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফাঁস করে দেন, কীভাবে নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় হরিয়ানা ও গুজরাট থেকে ভুয়া ভোটারদের নাম বাংলার ভোটার তালিকায় যোগ করা হয়েছে। তিনি সতর্ক করেন যে, দিল্লি ও মহারাষ্ট্রে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে বিজেপি যা করেছে, তাই তারা এখন বাংলায় করার চেষ্টা করছে।
বাংলার ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার অধিকার একমাত্র এই রাজ্যের প্রকৃত ভোটারদেরই থাকা উচিত - ভুয়া নাম যোগ করা বা ইচ্ছাকৃতভাবে নাম কেটে দেওয়ার মাধ্যমে যাতে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নষ্ট না হয়, সেদিকেও আমাদের কড়া নজর আছে।
নির্বাচন কমিশন জেলা/বিধানসভা স্তরে BLA-1 এবং বুথ স্তরে BLA-2 অনুমোদন করেছে, যাতে ভোটার তালিকা যাচাই করা যায় এবং দাবি বা অভিযোগ উত্থাপন করা যায়।
যাচাই প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে, তৃণমূল কংগ্রেস দুটি অতিরিক্ত স্তর যোগ করেছে একটি ব্লক/টাউন স্তরে এবং একটি পঞ্চায়েত/ওয়ার্ড স্তরে যাতে তারা নিজেদের এলাকার যাচাই প্রক্রিয়া পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিচালনা, তদারকি এবং সহায়তা করতে পারে।
এটি নিশ্চিত করতে, বাংলা জুড়ে প্রতিটি বুথ-স্তরের এজেন্ট (BLA2) যাচাই প্রক্রিয়া এবং ডিজিটাল সরঞ্জাম (ডিজিটাল টুলস) ব্যবহারের উপর প্রশিক্ষিত হয়েছে।
প্রত্যেকটি BLA2 এখন প্রযুক্তি-সক্ষম এবং নতুন ও উন্নত Didir Doot App-এ সম্পূর্ণরূপে সংযুক্ত হয়েছে। যাচাই প্রক্রিয়া ডিজিটাল মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে যা তৃণমূল কংগ্রেসের স্বচ্ছ, সরাসরি এবং অ্যাপভিত্তিক ক্যাম্পেইন বাস্তবায়নের বৃহত্তর লক্ষ্যকে সামনে রেখে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
এই অভিযান বাংলার প্রতিটি জেলার প্রতিটি বুথে পরিচালিত হবে, যেখানে হাজার হাজার প্রশিক্ষিত তৃণমূল ভরের কর্মী সরাসরি কাজ করবেন।
প্রথমবারের মতো তৃণমূল কংগ্রেস এমন একটি উদ্যোগ নিয়েছে যেখানে রাজ্যস্তরের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে বুখস্তরের কর্মী পর্যন্ত ১ লক্ষেরও বেশি দলের সক্রিয় সদস্যকে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা হয়েছে। এটি একটি অভিনব উদ্যোগ, যা দলীয় কাজকর্মকে বাস্তব সময়ে ও প্রযুক্তির সাহায্যে ভোটার যাচাইয়ের সঙ্গে যুক্ত করেছে।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে, আমরা দেখেছি যে দিল্লি ও মহারাষ্ট্রে নির্বাচনের আগে কিভাবে ভুয়া ভোটারদের তালিকায় যোগ করা হয়েছে।
প্রতিটি ভুয়া সংযোজন বা ভুলভাবে নাম বাদ দেওয়া আমাদের গণতন্ত্রের ভিতকে দুর্বল করে – আর বাংলায় আমরা তা রুখতে বদ্ধপরিকর।
এ কারণেই এই অভিযান সারাবছর চলবে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত, যাতে প্রতিটি সন্দেহজনক সংযোজন বা বাতিল করা নাম চিহ্নিত করে তা দ্রুততার সাথে সংশোধন করা যায়।
যদি কোনো ভোটার বা তাদের পরিচিত কাউকে ভুলভাবে বাদ দেওয়া হয়ে থাকে, অথবা কেউ জানেন যে বহিরাগতরা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তবে আমরা তা সংশোধন করতে প্রস্তুত আছি।
এটি বাংলার গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রাম। এই লড়াই শুরু হয় বুথ থেকে এবং মানুষের কাছ থেকে। আমরা সকল নাগরিককে অনুরোধ করছি, এই আন্দোলনকে সমর্থন জানাতে, সজাগ থাকতে এবং নিশ্চিত করতে যে বাংলার নির্বাচন শুধুমাত্র বাংলার মানুষের জন্য হবে।
রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি তুলে ধরে রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় আরও বলেন, প্রথম দিন থেকেই, আমাদের চেয়ারপারসন এবং মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন যে, বাংলা হলো শান্তির ভূমি, যেখানে সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী এবং সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করেন। আমরা বিশ্বাস করি "ধর্ম যার যার, উৎসব সবার" অর্থাৎ, বিশ্বাস ব্যক্তিগত, কিন্তু উৎসব সবার জন্য।
এই একই ভাবনাটিই বিজেপি ধ্বংস করতে চাইছে। তারা ধর্মীয় বিভাজনে তাদের শক্তি খোঁজে, এবং এখন তাদের নেতারা প্রকাশ্যে উসকানিমূলক ভাষণ দিয়ে সম্প্রদায়কে বিভক্ত করতে ও সহিংসতা উসকে দিতে চেষ্টা করছে। তারা বাংলার বাইরে থেকে সমাজবিরোধী উপাদান এনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।
তারা তাদের পুরো দলীয় যন্ত্রকে মিথ্যা তথ্য এবং প্রচারণা ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করেছে। তাদের অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডল থেকে বাংলার সাথে সম্পর্কহীন ছবি ভুলভাবে প্রচারিত হচ্ছে যেন তা এই রাজ্যের ঘটনার চিত্র। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো বাংলায় সাম্প্রদায়িক ঘৃণার আগুন জ্বালানো।
যারা দাঙ্গা উসকে দেয়, তারা কখনোই মানব জীবনের মূল্য বুঝতে পারবে না। যখন বিজেপি আগুন জ্বালাচ্ছে, তখন রাজ্য প্রশাসন, পুলিশ, সাংসদ এবং স্থানীয় নেতারা সামনে থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করছে এবং পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২০০-এরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা হিংসা সৃষ্টি করেছে, তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
আজ, শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেইসব পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকার সাহায্য অনুদান ঘোষণা করেছেন যারা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন। যেসব বাড়ি ধ্বংস হয়েছে, সেগুলি বাংলার বাড়ি প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্নির্মাণ করা হবে। যেসব দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলিরও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
যখন বিজেপি বাংলার সামাজিক কাঠামোকে ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে, তখন আমাদের একত্রিত থাকতে হবে। উসকানিতে পা দেবেন না। তাদের ফাঁদে পা দেবেন না। যতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার নেতৃত্ব দেবেন, ততদিন কোনো শক্তি আমাদের বিভক্ত করতে পারবে না। এটি একটি রাজনৈতিক লড়াই নয়; এটি আমাদের সংবিধান, আমাদের গণতন্ত্র এবং বাংলার চেতনাকে রক্ষা করার লড়াই।
সব শেষে কাটোয়ার বিধায়ক তথা তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, এই ভূমি যেমন কাজী নজরুল ইসলামের, তেমনই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরও। আমরা এর সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে যেকোনো মূল্যে রক্ষা করব।