Pre Puja Tantbastra Mela
প্রাক পূজা তাঁত বস্ত্র মেলা শুরু হয়েছে বর্ধমানে
Bengal Times News, 6 September 2024
জগন্নাথ ভৌমিক, বর্ধমান : প্রাক পূজা তাঁত বস্ত্র মেলা শুরু হয়েছে বর্ধমানের কার্জন গেট সংলগ্ন খ্রীষ্টান চার্চ প্রাঙ্গণে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ এবং বস্ত্র দপ্তর আয়োজিত এই মেলা এবার ১৩ তম বর্ষে। ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর এগারো দিন ব্যাপি মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় শুক্রবার। উপস্থিত ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামা প্রসন্ন লোহার, সহকারী সভাধিপতি গার্গী নাহা, বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ডাঃ শর্মিলা সরকার, বিধায়ক খোকন দাস, শম্পা ধাড়া, রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং বস্ত্র দপ্তরের সহ অধিকর্তা সুদীপ্ত ভট্টাচার্য, জেলা পরিষদের ক্ষুদ্র শিল্প, বিদ্যুৎ ও অচিরাচরিত শক্তি দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ আরতি খান সহ অন্যান্য কর্মাধ্যক্ষ, তাঁত মেলার ডিস্ট্রিক্ট কোঅর্ডিনেটর রঞ্জিত মাইতি আরও অনেকে।
এবারের মেলায় মোট ৪১ টি স্টল বসেছে। হরেক রকম তাঁতের শাড়ি ও অন্যান্য বস্ত্র সামগ্রীতে সেজে উঠেছে প্রাক পূজা তাঁত বস্ত্র মেলা।
রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং বস্ত্র দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সমগ্র বর্ধমান জেলা কৃষিজ ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। সম্প্রতি জেলাটি পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তথাপি এই পূর্ব বর্ধমান জেলার একটা বড় অংশের মানুষ তাঁত কার্যের উপর নির্ভরশীল এবং তারা তাদের রোজগার ও অন্নসংস্থান তাঁত মাধ্যমেই মেটান। প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজাবের অধিক মানুষজন প্রত্যেকে তারা তাদের রুজি রোজগার ও দৈনন্দিন অন্নসংস্থান এই তাঁতের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। কালনা জোনের অন্তর্গত ধাত্রীগ্রাম, সমুদ্রগড়, নসরতপুর, শ্রীরামপুর, গোয়ালপাড়া, হাটশিমলা ও কালনাতে জামদানি ও টাঙ্গাইল ধরনের শাড়ি বুনন হয়ে থাকে। কাটোয়া জোনের অন্তর্গত কেতুগ্রাম, ঘোরানাশ, পারুলিয়া ও তামাঘাটা অঞ্চলে অনুরূপ শাড়ি বয়ন হয়ে থাকে।
বর্তমানে ৬০টি হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার (২৫৫৫৫ জন তন্তজীবী নিয়ে) কার্যরত আছে। অপরদিকে ৭২টি প্রাথমিক তন্তুবায় সমবায় সমিতি (১৫১০৭ জন তন্তুজীবী) কর্মরত আছে।
অদ্যাবধি ক্লাস্টার বাবদ প্রায় ৩৫ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দকৃত হয়েছে, তার দ্বারা তন্তুজীবীদের বিভিন্ন তাঁত সংক্রান্ত দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেওপয়া হয়েছে, ১৭ টি শোরুম ও অফিসগৃহ তৈরি হয়েছে, ৮১০ জন তন্ত্রজীবীদের জন্য ব্যক্তিগত তাঁতঘর নির্মিত হয়েছে এবং তরল এ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। ভবিষ্যতে ক্লাস্টারের আওতাভুক্ত তন্ত্রজীবীদের জন্য আরও ব্যক্তিগত তাঁত ঘর নির্মাণ ও আরো ২৮ টি CFC র কাজ সম্পন্ন হবে এবং এর জন্য দ্বিতীয় কিস্তি টাকা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। মোট ৪ কোটি ৮৬ লক্ষ ৯৪ হাজার ৮ শত টাকা প্রকল্প ব্যয়ে ১৭ টি সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্র (CFC) স্থাপিত হয়েছে। মোট ৫ কোটি ৪ হাজার টাকা প্রকল্প ব্যয়ে ক্লাস্টার এর আওতাধীন তাঁত শিল্পীদের কাজের সুবিধার জন্য ৮১০ টি তাঁতঘর নির্মিত হয়েছে।
ইতিপূর্বে মোট ৩ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা প্রকল্প ব্যয় করে ওয়েস্ট বেঙ্গল হ্যান্ডলুম সার্কিট স্কিম ২০১৪ ও অন্যান্য স্কিমের মাধ্যমে ২৩০৬৩ জন তাঁত শিল্পী ও তাঁত শিল্পের সাথে যুক্ত কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া দুটি উল্লেখযোগ্য বিষয়ের প্রথম টি হল তাঁতসাথী প্রকল্প আর দ্বিতীয়টি তাঁতের হাট। তাঁতসাথী প্রকল্পে কালনাজোনে ১৬৯৪০ টি ও কাটোয়া জোনে ৭০৫০ টি অর্থাৎ মোট ২৩৯৯০ টি তাঁত ও তাঁত সরঞ্জাম বিলি করা হয়েছে তাঁতবিহীন তন্তুজীবীদের মধ্যে। প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩৮ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা।
তাঁতের হাট প্রকল্পে সমগ্র তন্তুজীবী তথা তাঁত শিল্পের বহুমুখী চাহিদার কথা ভেবে পূর্ব বর্ধমান জেলার অধিনে দুটি জায়গায় তাঁতশ্রী প্রকল্পের অধীন হ্যান্ডলুমহাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একটি পূর্বস্থলী ১নম্বর ব্লকের শ্রীরামপুরে ও অপরটি কালনা ১নম্বর ব্লকের অন্তর্গত ধাত্রীগ্রামে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হ্যান্ডলুম হাবের আওতায় বহুমুখী চাহিদা মেটানোর প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। এখানে ইয়ার্ন ব্যাঙ্ক, শোরুম, ডিজাইন সেন্টার, ট্রেনিং সেন্টার, CFC, কনফারেন্স হল, গেস্ট হাউস ইত্যাদি একই জায়গায় থাকার পরিকল্পনা রয়েছে। শুধুমাত্র পার্শ্ববর্তী এলাকা নয় বহু দূরবর্তী জায়গার তন্তুজীবী তথা তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন এর সুফল পাবেন।
তাঁতের হাট শ্রীরামপুর প্রকল্পটি ৭ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রূপায়িত হয়েছে। তন্তুজীবীদের কাছ থেকে উৎপাদিত বস্ত্র সামগ্রী তন্তুজ কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছেন। এখন থেকে ভবিষ্যতেও এখান থেকে বস্ত্র বিপণন করা হবে।
তাঁতের হাট ধাত্রীগ্রাম প্রকল্পটি ৩ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রূপায়িত হয়েছে। হস্ততাঁত উন্নয়ন আধিকারিক, কালনা দপ্তরটি বর্তমানে এখানে কার্যরত আছে। এখানে দৈনিক গড়ে ১ লক্ষ টাকার তাঁতিদের তৈরি সামগ্রী বিক্রয় হচ্ছে।
পাকা সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে পূর্বস্থলী ও অন্যান্য এলাকার মূলত তাঁত শিল্প সহ অন্যান্য পেশায় যুক্ত হাজার হাজার গ্রামীণ মানুষ উপযুক্ত রাস্তার পরিকাঠামোর অভাবে তাদের উৎপাদিত পন্যসামগ্রী স্থানীয় বাজারে বা জনবহুল এলাকায় নিয়ে যেতে সমস্যার সম্মুখীন হতেন। এই অবস্থায় তাদের কথা ভেবে তাঁত ও বস্ত্র দপ্তর এগিয়ে আসে এবং অর্থ অনুমোদন করে।
এছাড়া কল্যাণমূলক প্রকল্পে তাঁতশিল্পীদের আর্থিক সহায়তা প্রকল্প ২০২৪ পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁতশিল্পীদের উন্নতির স্বার্থে তাঁত ও তাঁতঘর সারানোর জন্য ৫০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করবেন, যা তাঁতশিল্পীদের ব্যাঙ্ক একাউন্টে সরাসরি দেওয়া হবে। এছাড়াও ১০০০০ টাকা আর্থিক মূল্যের কাঁচামাল হিসেবে সুতো প্রদান করা হবে। উক্ত প্রকল্পের ফর্ম সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস থেকে দেওয়া ও নেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২০০০ তাঁতশিল্পী ফর্ম জমা করেছেন।
দুয়ারে সরকার ও এম.এস.এম.ই ক্যাম্পের মাধ্যমে তাঁতিদের নাম নথিভুক্তিকরণ প্রকল্পে সমগ্র পূর্ব বর্ধমান জেলার মোট ২০ হাজার ১৪২ জন তাঁতির নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে কালনা জোনে ৫৮৪৩ জন ও কাটোয়া জোনে ১৪২৯৯ জন তাঁতির নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে।