বঙ্কিম স্মরণ : ধর্ম, বেদান্ত, কর্মযোগ, মানবিকতা ও উপন্যাসে নারী বিষয়ক মনোজ্ঞ আলোচনা
Bengal Times News, 16 March 2024
লুতুব আলি, নৈহাটি : সাহিত্য সম্রাট ঋষি বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম শহর নৈহাটির ঐকতান প্রেক্ষাগৃহের সমরেশ বসু কক্ষে অনুষ্ঠিত হলো এক মহতী অনুষ্ঠান। যার শিরোনাম ছিল বঙ্কিম স্মরণ ও কবিতা মজলিশ। এই অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিল বঙ্কিম পরম্পরা কলকাতা। অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণে ছিলেন বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পঞ্চম প্রজন্ম, বঙ্কিম পরম্পরার সম্পাদক বিশিষ্ট কবি জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়। ভিন্ন স্বাদের এই অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও গুণীজনদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়। জাতীয় স্তোত্র বন্দেমাতরম সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের নান্দনিক শুভ সূচনা করেন নমিতা সেন ও দুর্বাদল বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে ভারতের জাতীয় পতাকা ও ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতির প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা-সম্মান জ্ঞাপন করা হয়। বিশিষ্ট অতিথি বরিষ্ঠ লেখক ও গবেষক পার্থসারথি গায়েন আলোচনা করলেন বঙ্কিমচন্দ্রের ধর্ম ও মানবিকতা।
অধ্যাপিকা ড. দেবযানী ভৌমিক চক্রবর্তী আলোকপাত করেন বঙ্কিম উপন্যাসে নারী। প্রাবন্ধিক স্নেহাশীষ চক্রবর্তী আলোচনা করলেন বঙ্কিম বাবুর সময়কাল ও তাঁর অস্মিতা নিয়ে। কবি ফাল্গুনী ঘোষের আলোচনায় উঠে এলো বেদান্ত, কর্মযোগ ও বঙ্কিমচন্দ্র। এছাড়াও সম্মানীয় অতিথিদের মধ্যে ছিলেন কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী সোনালী কাজী। অনুষ্ঠানের অতিরিক্ত পাওনা ছিল সোনালী কাজীর সংগীত ও কবিতা। তাঁর সাবলীল কন্ঠের প্রতি দর্শক শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে যান। দুই বাংলায় সমাদৃত বিশিষ্ট কবি আরণ্যক বসু, রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরসূরী বর্ষীয়ান কবি ও বিশিষ্ট গীতিকার পরাশর বন্দ্যোপাধ্যায়, পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের উত্তরসূরী তথা বিদ্যাসাগর মিশনের প্রাণপুরুষ অমিতাভ বন্দোপাধ্যায়, মুখ বই আলাপ চারিতার প্রাণপুরুষ আশুতোষ চক্রবর্তী, কবি কেশব রঞ্জন, কবি সুব্রত ভট্টাচার্য, কবি মৃণাল কান্তি দে, কবি প্রতিভা গাঙ্গুলী, কবি জিতা লাহিড়ী, সমাজকর্মী দেবাশীষ পাল, বাচিক শিল্পী সুবীর মুখার্জী, কবি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখদের বক্তব্যে অনুষ্ঠানে অনন্য মাত্রা যোগ করেন।
এছাড়াও বাচিক শিল্পী রঞ্জনা কর্মকারের আবৃত্তি মন ছুঁয়ে যায়। বঙ্কিমচন্দ্রের কালজয়ী উপন্যাস দুর্গেশ নন্দিনীর বিশেষ অংশ পাঠে ছিলেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী চন্দনা দাস। জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়ের মূল রচনায়, প্রখ্যাত কন্ঠ প্রজ্ঞা পারমিতার সংকলন ও উচ্চারণে বন্দে মাতরম এর ওপর শ্রদ্ধার্ঘ্য কোলাজ ছিল মনোময় উপস্থাপনা। বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী বিপ্লব চক্রবর্তীর আবেগময় কন্ঠের পরিবেশন মনে দাগ কাটে। আমন্ত্রিত উপস্থাপনায় শিশু ও কিশোর শিল্পীরা বঙ্কিমচন্দ্র, স্বদেশ ও স্বাধীনতা বিষয়ক আবৃত্তি পরিবেশন করে। রাখি ভট্টাচার্যের পরিচালনায় শ্রুতি কথা, স্বাগত মন্ডল মল্লিকের পরিচালনায় হালিশহর কথামালা, প্রজ্ঞা পারমিতার পরিচালনায় কিরন্যা অনবদ্য কথা ও কবিতার কোলাজে ভরিয়ে তোলে সভা কক্ষ। এদিনের সমগ্র অনুষ্ঠানটি হয়ে উঠেছিল সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রেমীদের আলোকোজ্জ্বল উপস্থিতিতে গৌরবোজ্জ্বল। জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় জানান, ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের উত্তরসূরী হিসেবে নিজেকে গর্ববোধ করি। বর্তমানে অবক্ষয়ী সমাজ ব্যবস্থায় বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা বেশি করে পড়া জরুরী। বঙ্কিমচন্দ্রের আদর্শকে তুলে ধরতে বঙ্কিম পরম্পরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলেছে।
কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী সোনালী কাজী বলেন, জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় খুবই আন্তরিকভাবে এই সংস্থাটিকে পরিচালিত করছেন। আগামী দিনে বাংলা তথা ভারতীয় সাহিত্য সংস্কৃতি ও মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে ধারাবাহিক কার্যক্রমের রূপরেখা রচনা করছে বঙ্কিম পরম্পরা। এদিনের সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে সঞ্চালনায় ছিলেন দিল্লি প্রবাসী বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী মৌলি গাঙ্গুলী ভট্টাচার্য।